• কোচবিহারে এলেই খেতেন তোর্সার বোরলি ও দেশি মুরগিঅনন্ত রায় (প্রাক্তন বনমন্ত্রী)
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • বৃহস্পতিবার সকাল বেলা বুদ্ধদার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর কিছুক্ষণ থম মেরে বসে ছিলাম। কিছুই ভালো লাগছিল না। কত পুরানো স্মৃতি ভিড় করে আসছিল। কোচবিহারে এলে দেখেছি তাঁর এটা চাই, ওটা চাই এরকম কোনও মানসিকতা ছিল না। যা রান্না হতো সেটাই তিনি খেতেন। কিন্তু তাঁর প্রিয় ছিল তোর্সার বোরলি মাছ, দেশি মুরগির মাংস। আমি যুব সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০০৩ সালে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হই। তখন মাসে একবার করে কলকাতায় বৈঠক হতো। একদিন নিরুপম সেন জানালেন আমার আর সভাধিপতি থাকা হচ্ছে না। আমি ভাবলাম কি ভুল করলাম? পরে জানা গেল দল আমাকে বিধানসভা নির্বাচনে মাথাভাঙা থেকে প্রার্থী করছে। সেখান থেকে জিতে আমি বনদপ্তরের দায়িত্ব পাই। তখন থেকেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। বনের উন্নয়ন, আকর্ষণ কীভাবে বাড়ানো যায় এসব নিয়ে আলোচনা হতো। বন, বন্যপ্রাণী, সামাজিক বনসৃজনকে তিনি গুরুত্ব দিতেন। নানা পরামর্শ দিতেন।

    বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শেষবার কোচবিহারে এসেছিলেন ২০১০ সালে। নিউ ময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা রেললাইন স্থাপনের আন্দোলনে অসম-বাংলা জমায়েতে। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি তো কোনও দিন হলং বাংলো গেলাম না রে!’ আমি বললাম আপনাকে নিয়ে যাব। তাঁকে হলং বাংলোতে নিয়ে গেলাম। রাতে থাকা, খাওয়া ও পরদিন প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা করা হল। এই একবারই তিনি হলং বাংলোতে ছিলেন। কোচবিহারে এলে আগে পার্টি অফিস এবং পরে  মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সার্কিট হাউসে থাকতেন। এখানকার বাদামি জলপাই আলু, মিষ্টি কুমড়োর ফুলের বড়া তাঁর খুব প্রিয় ছিল। তিনি আমাকে মিষ্টি কুমড়োর ফুল দেওয়ার কথা বলতেন। আমার নিজের জমিতে তখন মিষ্টি কুমড়ো, আলু চাষ হতো। আমি ভাইপোকে বলে তা তুলে কলাপাতায় মুড়ে দিতাম যাতে তাজা থাকে। কলকাতায় নেমে শিয়ালদহ থেকেই গাড়ি নিয়ে সোজা পাম অ্যাভিনিউ। তিনি বলতেন, ‘আমার জন্য এত কষ্ট করলি!’ এভাবেই তাঁর সঙ্গে একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)