• পাঁচ বছর ধরে নেই গ্রন্থাগারিক, ধুঁকছে ৭০ বছরের জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগার
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: থরে থরে সাজানো সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশ-শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বই। কিন্তু, পড়া তো দূরের কথা, সেসব বইয়ের পাতা উল্টে দেখার মতো পাঠক নেই। ফলে ধুলো জমছে গল্প-উপন্যাসের বইয়ে। সারাদিন ধরে আলো জ্বলছে। পাখা ঘুরছে। কালেভদ্রে কেউ যদি আসেন তাঁরই অপেক্ষায় কর্মীরা। না কোনও গ্রামীণ লাইব্রেরি নয়, এই ছবি খোদ ৭০ বছরের প্রাচীন জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগারের। পাঁচ বছর ধরে গ্রন্থাগারিক নেই। দু’জন স্থায়ী কর্মী ও ডেপুটেশনে আসা তিন কর্মী দিয়ে কোনওমতে চলছে জেলা গ্রন্থাগার। 

    একসময় এখানে উপচে পড়ত পাঠকের ভিড়। নিয়ম করে আসত স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা। এখন আর কিছুই নেই। পড়ুয়া টানতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগাররিমুখী হতে জানানো হয়েছে আবেদন। গ্রন্থাগারে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তারপরও বদলায়নি ছবিটা। বর্তমানে প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা গ্রন্থাগারের দোতলায় সিভিল সার্ভিসের কোচিং সেন্টার চলছে। সেখানেই যা দুই-চারজন পড়ুয়া আসেন। কিন্তু গল্প, উপন্যাসের বই পড়তে সেই অর্থে কারও যে পা পড়ে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কর্মীরা। 

    অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইমরান শেখ বলেন, লাইব্রেরিতে পড়ুয়া টানতে উদ্যোগ জারি রয়েছে। স্কুল-কলেজের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে, তারা যাতে পড়ুয়াদের গ্রন্থাগারে আসতে উৎসাহিত করে। আমরা ডিজিটাল লাইব্রেরি গড়ারও উদ্যোগ নিচ্ছি। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক সুরেশচন্দ্র রায় বলেন, জলপাইগুড়ি থেকে ১৯ কিমি দূরে বেরুবাড়িতে একটি লাইব্রেরির দায়িত্বে রয়েছি। সেই দায়িত্ব সামলে জেলা গ্রন্থাগারে সপ্তাহে চারদিন যাওয়ার চেষ্টা করি। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে জেলা গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিক নেই। এতে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়। 

    জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগার সূত্রে খবর, গ্রন্থাগার শুরুর সময় থেকে এখনও পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৪৯৪টি বই কেনা হয়েছে। দান করা বইয়ের সংখ্যা ২৮ হাজার ৩৯৩। এরমধ্যে বন্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু বই। সেই সংখ্যা অন্তত ২০ হাজার। তারপরও এখানে রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য বই। একসময় পাঠক ছিল ২৭০০। কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকে। ২০১৯ সালে ‘বই ধরো বই পড়ো’ কর্মসূচিতে নতুন করে পাঠক খোঁজার কাজ শুরু হয়। এতে সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৭৪ জন। এই সংখ্যাও শুধু খাতায়কলমে। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকলেও বাস্তবে পাঠকের দেখা মেলে না। লাইব্রেরির রেজিস্টার বলছে, দিনে ১০-১২ জন পড়ুয়া আসেন। বেশিরভাগই চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)