• লড়াইটা ছিল তাঁর নীতির বিরুদ্ধেই, বলছে প্রয়াণে শোকাহত নন্দীগ্রাম
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: রাজনীতির মহাকাব্যে নন্দীগ্রাম তাঁকে ‘ট্রাজিক হিরো’ বানিয়েছে। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য হয়তো ভালোই ছিল, তাঁর কিন্তু কর্মপদ্ধতি ঠিক ছিল না। জমি নেওয়ার আগে মানুষকে বোঝানো দরকার ছিল। কিন্তু, সেটা করা হয়নি। মানুষকে ঠিকমতো বোঝাতে পারলে নন্দীগ্রাম হয়তো আজ ‘দ্বিতীয় হলদিয়া’ হয়ে যেত। কিন্তু, তাঁর হঠকারী কাজের জন্যই তাঁকে ও সিপিএমকে পিছু হটতে হয়েছিল। আচমকা জমি অধিগ্রহণের নোটিসেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রাম। তার জন্য বিরোধীরা তো বটেই তাঁর পার্টিও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কাঠগড়ায় তুলেছিল। বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামেরও মন খারাপ। অনেকেই বলছেন, তিনি শিল্পায়নের কথা ভেবেই হয়তো বড় শিল্পগোষ্ঠীকে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর পথ ঠিক ছিল না। তার জন্য বহু ক্ষতি হয়েছে। প্রাণ গিয়েছে অনেকের। তিনি বুঝতে পারেননি, সংখ্যাই সব নয়, শেষ কথা বলে জনগণ। 

    ২০০৭ সালে ১০ নভেম্বর গোকুলনগরে করপল্লিতে নিখোঁ‌জ হন জমি আন্দোলনকারী ভগীরথ মাইতি। আজও তাঁর খোঁজ নেই। ভগীরথবাবুর স্ত্রী সুষমা মাইতি বলেন, ওঁর নীতির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়ে জয়ী হয়েছি আমরা। এজন্য আমার মতো অনেককে তাঁদের আপনজনদের হারাতে হয়েছে। তারপর থেকে বুদ্ধদেববাবুর প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি জাগেনি। কিন্তু, তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে খারাপ লেগেছে। হয়তো তিনি ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা যে স্বজনহারা হয়েছি!

    নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা স্বদেশ দাস বলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ব্যক্তিগতভাবে সজ্জন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে আমরা মর্মাহত। কিন্তু তিনি নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের প্রতি তিনি সুবিচার করেননি। উনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। কারণ আমরা শিল্পবিরোধী ছিলাম না, ছিলাম এসইজেড বিরোধী। পুনর্বাসন ও জমির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিকে সামনে রেখে সেদিন আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু, সরকার সেই আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করেছিল দমনপীড়নের মাধ্যমে। তাঁর ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই সেসময় মৃত্যুর মিছিল দেখেছিল নন্দীগ্রাম।
  • Link to this news (বর্তমান)