• অসুস্থ শরীরেই হাজির বুদ্ধবাবুর সাদা অ্যাম্বাসাডরের চালক ওসমান
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মরদেহ নিয়ে চলে যাচ্ছে কাচের গাড়ি। সবুজ টি-শার্ট আর লুঙ্গি পরে রাস্তায় একটা চেয়ারে বসে আছেন ওসমান। মীরা ভট্টাচার্যকে দেখে শিশুর মতো কেঁদে উঠলেন দিন কয়েক আগে সেরিব্রাল আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ। চেয়ার থেকে ওঠার ক্ষমতাও নেই। কিছুক্ষণ বাদে সুচেতন এলেন। লাল সেলাম জানিয়ে গেলেন ওসমানকে। ওই ব্যক্তিই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাদা অ্যাম্বাসাডরটি (ডব্লুবি-০৬/০০০২) ৩০ বছর চালিয়েছেন। সুখে-দুঃখে ওসমান ছিলেন বুদ্ধদেবের ছায়াসঙ্গী। 

    ওসমান হাঁটতে চলতে পারেন না। খবর পেয়েই এদিন সকালে ছেলে আর নাতির কাঁধে ভর দিয়ে চলে এসেছিলেন পাম অ্যাভিনিউতে। জড়ানো গলায় ওসমান বলছিলেন, ‘আমি সাহেবের সঙ্গে ৩০ বছর ছিলাম। সাহেবের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি।’ বলেই কাঁদতে শুরু করেন তিনি। পাম অ্যাভিনিউয়ের  বাড়ির ফুটপাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একটি ছবি রাখা হয়েছে। সেখানে ফুল দিয়ে ওসমান তাঁর ছেলেকে বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। একাই দাঁড়াব। বলেই কষ্ট করে মুষ্টিবদ্ধ হাতখানা আকাশে তুললেন। সেই সময় পাশে দাঁড়ানো হরেন অধিকারী ছল ছল চোখে তাকিয়ে রয়েছেন। হরেন গত চার বছর ধরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেখাশুনো করছেন। মৃত্যুকালে তিনিই ছিলেন বুদ্ধদেববাবুর সামনে। হরেন বলছিলেন, ‘আমি অনেক কথা জিজ্ঞেস করতাম। উনি মাঝে মধ্যে উত্তর দিতেন। এত বড় একজন মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। উনি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার খাওয়া হয়েছে কি না, জিজ্ঞেস করে নিতেন। গত রাতেও ভাত-ডিম-তরকারি খেয়েছিলেন। এদিন সকালেও চা-বিস্কুট খেয়েছিলেন। তারপর আম, ছাতু, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়েছিলেন। ওষুধ নেওয়ার পর বমি করে তুলে দিলেন। ডাক্তারের কথা মতো বাইপ্যাপ দেওয়া হল। তবে শেষ রক্ষা হল না।’ হরেনের সঙ্গে বুদ্ধদেববাবুর দেখাশুনা করতেন শম্ভু বৈদ্য। তিনিও খবর পেয়ে এদিন চলে এসেছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। 

    বুদ্ধদেববাবুকে শেষ দেখা দেখার জন্য জানলায় মুখ রেখেছিলেন মনিকা ঘোষ। বলছিলেন, ‘আমাদের একটা খাবারের দোকান আছে। আমাদের দোকানের চিকেন, খিচুপি-লাবরা খেতে খুব ভালোবাসতেন উনি। একবার যদি ওঁকে বলা হত, মানিকের দোকানের খাবার। আর কিছু বলতে হত না।’ ভিড় জমিয়েছিলেন অনিমা ঘোষ, মমতা মণ্ডলরা। ওঁরা বলছিলেন, ‘রাত বিরেতে সমস্যা হলে ওঁর বাড়িতে গিয়ে বেল বাজিয়ে ছিলাম একবার। হাসি মুখে কাজ করে দিয়েছিলেন।’ বুদ্ধদেববাবুর প্রতিবেশী প্রাক্তন সাংসদ সর্দার আমজাদ আলি। তিনি বলছিলেন, ‘অপূরণীয় ক্ষতি হল। ওঁর যে নিয়মানুবর্তিতা তা ছিল শেখার মতো।’
  • Link to this news (বর্তমান)