• স্নেহের কালুদের প্রবল দাপট পুরসভায়, সাবধানে পা ফেলতে হয় কাউন্সিলার থেকে চেয়ারম্যানকেও
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর:  পুরসভার ভিতরে ‘কালু পাপা’র ভরা সংসার। তার ছোট ছেলে ‘ঘন্টা’র দাপটে সর্বদা তটস্থ থাকে সংসারের বাকি সদস্যরা, পুরসভার কর্মীরাও। তাদের প্রতিদিনের লাঞ্চে বাধ্যতামূলকভাবে চিকেন থাকতেই হয়। সকালের দিকে কেউ কেউ ভালোবেসে যত্ন করে খাওয়ায় কেক-বিস্কুট। রাত বাড়লে কালুদের কখনও কখনও দুষ্টুবুদ্ধি চাপে মাথায়। তখন অফিস ও পার্ক করা গাড়ি তদারকির কাজে বেরয় তারা। ফাইল থেকে গাড়ি, সমস্ত কিছু পরখ করতে গিয়ে দাঁত বসায়। ফলে বিপত্তি। কখনও অফিসের ভিতরটিকে শৌচালয় বানিয়ে ফেলে। তবে তাদের সব অত্যাচারই গা সওয়া দক্ষিণ দমদম পুরসভার সবার। ফলে নিজেদের সংসার দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে কালু বাহিনী।

    দক্ষিণ দমদম পুরসভার একতলার প্রবেশ পথে একাধিক অফিস। ক্যান্টিন রয়েছে। আছে লিফট। সেই অংশে অবাধ বিচরণ সাতখানি কুকুরের। তাদের প্রত্যেকের পৃথক নাম। পুরসভার কর্মীরা জানালেন, বেশি বয়সের সারমেয়টির নাম কালু পাপা। তার সঙ্গীর নাম লালি। পথ দুর্ঘটনায় দুই শাবক মারা গিয়েছে। বাকি পাঁচটির নাম, দুষ্টু, ভদু বাচ্চা(মোটা), সুন্দরী,পচা ও ঘণ্টা। সবথেকে ছোট হল ঘণ্টা। সে সবথেকে দুরন্ত। তাদের পাশ কাটিয়ে খুব সন্তর্পনে অফিসে ঢুকতে হয় চেয়ারম্যান থেকে আধিকারিক. ও সাধারণ মানুষকেও। কালুদের দুপুরে দিতে হয় ভাত ও মাংসের ঝোল(মুরগির মেটে ও পা)। পুরসভার কর্মীদের যত্নে দেশি প্রজাতির এই কুকুরগুলির চেহারা খোলতাই। বিদেশি গোত্রের কুকুরদের হার মানায় তাদের চেহারা। পুরসভার অন্দরমহলে তারা দাপট দেখাবে না তা কী হয়? কেউ বেখেয়ালে লেজে বা দিলে বা শরীরে ঠোকা লাগলে, খ্যাঁক করে ওঠে। পুরসভায় আসা অনেক মানুষ তাদের দেখলে ভয় পায়। আবার তারা কোনও কারণে বিরক্ত হলে তেড়েও যায়। এই বাহিনী বিড়ম্বনা তৈরি করেছিল কয়েক মাস আগে। অফিসের একটি দরজা সামান্য ফাঁক পেয়ে ঢুকে পড়েছিল। দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দিয়েছিল প্রচুর সরকারি নথি। বেশ কয়েকবার পুরসভার ভিতরে থাকা গাড়ির ইলেকট্রিক্যাল তারও কেটে দিয়েছিল। পুর আধিকারিকদের বৈঠকে কুকুর তাড়ানো নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কুকুরপ্রেমী কাউন্সিলারদের যুক্তি ও বাকিদের স্নেহে তাদের বেয়াদপি বারবার মাফ হয়ে যায়। পুরসভার দুই অস্থায়ী কর্মী অনুরাধা প্যাটেল ও সুপ্রিয়া বোস মূলত খেয়াল রাখে এদের। খাবারের টাকা, নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া, নির্বীজকরণ ও চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সংগ্রহ করেন পুরসভার কাউন্সিলার, আধিকারিক ও কর্মীদের থেকে। অনুরাধাদেবী বলেন, ‘তুলোয় দুধ খাইয়ে এদের ছোটবেলায় বাঁচিয়েছি। একটি কুকুরের ক্যান্সার হয়েছিল। কেমো দিয়ে দিয়ে রোগ নিরাময় করা হয়েছে। এদের ভালোবাসি বলে অনেকে কটাক্ষ করেন। সিআইসি মৃন্ময় দাসের মতো অনেকে আমাদের মানসিক ও আর্থিক সহায়তা দেন। এরা এখান থেকে গেলে বেঘোরে মারা পড়বে।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)