ক্যাবিনেটে তাঁর দপ্তরটা তথ্য ও সম্প্রচার থাকলেও মন্ত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন বেশ ওজনদার। এ হেন এক মন্ত্রী আচমকা মহাকরণে আসা বন্ধ করে দিলেন। এক দিন নয়, টানা কয়েকদিন। আমি তখন একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক।মন্ত্রী দপ্তরে আসছেন না এমন তো কতই হয়। আমরা, তখন যাঁরা মহাকরণ কভার করতাম, প্রায় সকলেরই নজর এড়িয়ে গিয়েছিল বিষয়টি। একটি বাংলা সংবাদপত্র খবর করে যে, মন্ত্রিসভা থেকে আচমকা পদত্যাগ করেছেন তৎকালীন তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! সালটা ১৯৯৩।
হইচই পড়ে যায়। সিপিএমের অন্দরে কোনও আলোচনা নেই, পার্টির তরফ থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা হচ্ছে বলেও শুনিনি। খবর পেলাম, কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই, পার্টি নেতৃত্বকেও না জানিয়েই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বুদ্ধদেব। যে সরকারি গাড়ি চড়তেন, সেটিও ছেড়ে দিয়েছেন। চালক ওসমানকে বলেছিলেন, গাড়ি মহাকরণের কার-পুলে জমা দিয়ে দিতে।
যা জানা গেল না, তা হলো কেন পদত্যাগ করেছেন তিনি? বুদ্ধবাবুকে বাড়িতে পাওয়া গেল না। পার্টি অফিসে তিনি যাচ্ছেন না। পার্টিতে বুদ্ধবাবুর ঘনিষ্ঠদেরও কাছে কোনও খবর নেই। তবে এর মধ্যে ওঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো। ক্লাস এইটের সুচেতনা তখন বলেছিল, ‘আমার বাবা অনেস্ট’। যদিও এই ইস্যু পুরোপুরি হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সিপিএম নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করে। বুদ্ধবাবু ফিরে আসেন মন্ত্রিসভায়।
কিন্তু, কেন পদত্যাগ? বাজারে তখন অনেক কিছুই রটেছিল। এক দলের বক্তব্য ছিল, দুর্নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন বুদ্ধবাবু। ছাড়ার আগে বলেছেন, ‘চোরেদের ক্যাবিনেটে থাকতে চাই না।’ তবে পার্টির মাথাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি যে, ইস্যু অন্য।
আরও পরে বুদ্ধবাবুর সঙ্গেও কথা বলে জানতে পারি, আসল কারণ ছিল এক প্রথম সারির নেতার পুত্র। তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগ আসছিল। সে কথা সেই নেতাকে জানাতেও গিয়েছিলেন বু্দ্ধবাবু। গোল বাধে তখনই। সেই নেতা তাঁকে ‘প্রমোদ দাশগুপ্তের ল্যাঙ্গট’ বলায় অপমানে মন্ত্রিসভা ছাড়েন বুদ্ধবাবু।