স্টাফ রিপোর্টার: প্রেসিডেন্সির পুরনো উপস্থিতি রেজিস্টার খুললে ৮৭ নম্বরেই দেখা যাচ্ছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, পড়ুয়া বুদ্ধর স্মৃতিবিজড়িত একাধিক নথি রয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রেসিডেন্সি কলেজ, অধুনা বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অন্যান্য বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের মতোই এই প্রাক্তনীর সঙ্গে যোগসূত্র প্রমাণকারী নথিগুলোও সংরক্ষণ করে রাখা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্সি থেকে অনেক বিদগ্ধ মানুষ তৈরি হয়েছেন। যাঁরা নিজেদের কর্মজীবনে ছাপ রেখে গিয়েছেন ও সমাজেও তাঁদের অনেক অবদান রয়েছে। উনি সেই রকমই একজন। তাঁর বিভিন্ন লেখা, ভর্তির রেকর্ড আমাদের কাছে থাকবে। তাঁরটাও সংরক্ষণ (আর্কাইভ) করা থাকবে।” এদিন শ্রদ্ধা জানাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা।
‘বাংলা পাঠচক্র’-এর সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছাত্রদের ম্যাগাজিন ‘আমাদের কথা’য় ‘বাংলা পাঠচক্রে’র এক বছরের যাত্রা ও আগামীর পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাতে ফুটে উঠেছে চেষ্টা সত্ত্বেও খামতি রয়ে যাওয়ার আক্ষেপ ও খামতিগুলো পূরণ না করার নেপথ্য কারণের বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বরাবরই আত্মবিশ্লেষণ করতে দেখা গিয়েছে। ছাত্রাবস্থা থেকেই যে তার শুরু, সেই প্রমাণ মিলেছে এই নথিতেই।
স্মৃতিচারণে ব্যস্ত সবাই। বাংলা বিভাগেরই ছাত্র তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেতা বিতান ইসলামের কথায়, “কোথাও গিয়ে আমাদের মননে, চিন্তনে, তাঁর জীবনবোধ, আদর্শ, স্পর্শ করে।” আক্ষেপের সুরেই বাংলা বিভাগের প্রধান উত্তমকুমার বিশ্বাস বলেন, “সারাজীবন রাজনৈতিক সন্ন্যাসীর মতো কাজ করে গেলেন। রাষ্ট্রকে, মানুষকে পরিষেবা দেওয়া ছাড়া, আর কোনও ব্রত ছিল না। কোনও ধনদৌলত নেই, সম্পদ নেই। ”
প্রেসিডেন্সির পাশাপাশি আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্মরণে ছিলেন বুদ্ধবাবু। দমদমের শেঠবাগান আদর্শ বিদ্যামন্দির–এই স্কুলেই কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক চিরঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথম মাসে বেতন পেয়েছিলেন ১১৩ টাকা। বেতন তোলার রেজিস্টারে সই করে তা নিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। সেই নথি রয়েছে স্কুলের কাছে। চিরঞ্জীববাবু বলেন, “উনি অত্যন্ত ছাত্রদরদী ছিলেন বলেই শুনেছি। আসতেন সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে। উনি স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন, সেটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের।” সমবেত হয়ে ছাত্র-শিক্ষকরা শ্রদ্ধা জানান সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন সেই শিক্ষককেই।