‘লোকের সেবা করতে এসে খুন হল’, বিচার চাইছেন মৃত চিকিৎসকের মা-বাবা
এই সময় | ০৯ আগস্ট ২০২৪
‘মা, আমরা খাচ্ছি। তোমরাও খেয়ে নাও।’ শেষবার নিজের বাড়িতে ফোন করে এই কথাটাই বলেছিলেন আরজি করের মহিলা চিকিৎসক। তারপরেই সেই অঘটন! মেয়েকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না, তবে হত্যার যেন বিচার হয় – সেটাই চাইছেন মৃত তরুণীর বাবা-মা।তরুণীর মা বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ডাক্তার বানিয়েছিলাম। আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে এরা। লোকের সেবা করতে এসে নিজেই খুন হয়ে গেল।’ তরুণীর বাবা এবং মাকে এদিন মরদেহ চিহ্নিতকরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। আরজি কর থেকে বেরিয়ে দু’জনেই দাবি করেন, দেওয়া হয়। তরুণীর গায়ে পোশাক ছিল না, গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার চাইছি।’
অন্যদিকে, ঘটনার পরেই এদিন হাসপাতালে যান ফরেনসিক আধিকারিকরা। ফরেনসিক আধিকারিকদের বক্তব্য ‘তরুণীর গায়ে কোনও পোশাক ছিল না। চশমা ভাঙা ছিল।’ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
পরিবার সূত্রে খবর, ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন ওই তরুণী। বড় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল চোখে। স্বপ্নপূরণের রাস্তায় এগিয়েও গিয়েছিলেন অনেকটা। কিন্তু, ৮ অগস্টের রাত সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল। বিভীষিকাময় রাত কেড়ে নিল প্রাণ। সেই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তদন্ত করছে পুলিশ। তবে, আরজি করে তরুণীর এভাবে চলে যাওয়াটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্য থেকে প্রতিবেশীরা।
বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিলেন আরজি করের ওই মহিলা চিকিৎসক। পাড়া-প্রতিবেশীদের যে কোনও বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতেন ওই তরুণী। এদিন সকালে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়তেই হতবাক সকলে। সোদপুর নাটাগড় অম্বিকা মুখার্জি রোডের সিআর পার্ক এলাকার বাসিন্দা ওই ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন সকলেই। এলাকাবাসীরা প্রশ্ন তুলছেন, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বড় কোনও রহস্য? কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারেন না পাড়ার চেনা মেয়ে। স্থানীয় এলাকায় স্কুল ড্রেসের দোকান রয়েছে তাঁর বাবার। ছোট থেকেই এলাকায় ‘মিশুকে’ বলে পরিচিত ছিলেন মেধাবী ওই ছাত্রী। সোদপুর থেকেই রোজ যাতায়াত করতেন আরজি কর হাসপাতালে। বেশ কিছুদিন আগে গাড়িও কেনেন। সেই গাড়ি নিয়ে সোদপুর থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করতেন তিনি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দেবী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ওঁকে দেখেছি পড়াশোনা নিয়েই থাকতো। সরকারি কলেজে সুযোগ পেল। আমাদের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মেলামেশা করতো। খুব ভালো মেয়ে ছিল।’ প্রায় বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করেন তরুণীর পরিবার। পাড়ার মেয়েটার এহেন পরিস্থিতির কথা শুনে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা।