• প্রয়াত বুদ্ধদেবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে করজোড়ে প্রণাম অভিষেকের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • মৃত্যু শোকের মধ্যেও রাজনৈতিক সৌজন্যতার ছবি শহর জুড়ে। প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রায় তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। বাম জমানার সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তৃণমূল যুবরাজ।

    উল্লেখ্য, বৃহস্পতির সকালে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়েছিলেন বুদ্ধদেব। তাঁর মরদেহ রাখা হয়েছিল পিস ওয়ার্ল্ডে। শুক্রের সকালে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বার করার পর বুদ্ধদেবের মরদেহ নিয়ে শেষযাত্রা শুরু হয়। শেষযাত্রায় মরদেহ প্রথমেই পৌঁছায় বিধানসভায়। সেখানেই উপস্থিত হয়েছিলেন অভিষেক সহ রাজ্যের মন্ত্রী থেকে অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বগণ। বুদ্ধদেবের মরদেহ বিধানসভা এসে পৌঁছাতেই পুস্পস্তবক দিয়ে বুদ্ধদেবকে শ্রদ্ধা জানান অভিষেক। তারপর তিনি করজোরে প্রণাম জানান বর্ষীয়ান বাম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সেই ছবি ক্যামেরাবন্দি হতেই দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক সৌজন্যতার নীতি প্রশংসিত হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সেই ছবি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস লেখে, “অভিষেক বন্দোপাধ্যায় প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রায় তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন। তিনি প্রয়াত নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করলেন। বিদেহী আত্মা শান্তিতে থাকুন!”

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিতে বুদ্ধদেবের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই নড়েচড়ে বসেছিল বঙ্গীয় তথা দেশীয় রাজনৈতিক মহল। ব্যতিক্রমী ছিলেন না অভিষেকও। প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আত্মার শান্তি কামনা করে অভিষেক বৃহস্পতিবারই নিজ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু সংবাদে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করে তাঁর আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এই দুঃখের সময়ে তাঁরা যেন শক্তি পান। ওম শান্তি!” কেবল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আত্মার শান্তি কামনা নয়, পাশাপাশি তাঁর আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের স্বান্তনা দিয়ে তাঁদের মনোবল বৃদ্ধি করার প্রয়াসী হয়েছিলেন অভিষেক। এদিনও বিধানসভায় সেই ছবিই ধরা পড়লো।

    অভিষেক তাঁর এই উচ্চমানের রাজনৈতিক শিক্ষাটা পেয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই, যার কাছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতির সংকীর্ণ গন্ডি এবং রাজনৈতিক ভেদাভেদের উর্ধে স্থান পেয়েছে মানবিকতা ও সৌজন্যতা। সে কারণেই বুদ্ধদেবের সাথে মমতার রাজনৈতিক আদর্শগত লড়াইটা আকাশ-পাতাল হলেও বৃহস্পতিবার বুদ্ধ-তনয় সুচেতন ভট্টাচার্যকে পাশে নিয়ে মমতা বলেছিলেন, “তাঁর মৃত্যু রাজ্যের পক্ষে বড় ক্ষতি।” সেই রাজনৈতিক দীক্ষা ও মমতার দেখানো পথে হেঁটেই বড়ো হয়েছেন অভিষেক। শুক্রবার দেখা যায়, কেবল পুস্পস্তবক দিয়েই বিরত ছিলেন না তৃণমূল সেনাপতি।

    পাশাপাশি প্রয়াত বুদ্ধদেবকে নতমস্তকে প্রণামও জানান। এমনকি, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমদের সঙ্গে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বুদ্ধদেবের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েও থাকেন অভিষেক। যুবরাজ বুঝিয়ে দেন, রাজনৈতিক মেরুকরণের ভাবনাটা কেবল ভোটযুদ্ধের ময়দানে এবং রাজনৈতিক লড়াইতেই শোভনীয়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার ক্ষেত্রে নয়। অভিষেকের আচরণ ও তাঁর অঙ্গভঙ্গিতে যেন মমতার শেখানো রাজনৈতিক সৌজন্যবোধেরই প্রতিফলন ঘটে। পাশাপাশি অভিষেকের চোখে মুখে থাকা উদাসীনতার ছাপ স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে বুদ্ধদেব-মমতার রাজনৈতিক লড়াই প্রত্যক্ষ করেছেন অভিষেক, তাই তাঁর মনে বুদ্ধদেব বিরোধী রাজনৈতিক চেতনা ও ভাবনা থাকলেও বুদ্ধদেবের প্রতি কোনো বিদ্বেষ ছিল না, যা অভিষেকের এদিনের আচরণে স্পষ্ট ফুটে ওঠে।

  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)