‘আত্মহত্যা করার মেয়ে নয়’, আর জি করের চিকিৎসকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ প্রতিবেশীরা
প্রতিদিন | ১০ আগস্ট ২০২৪
অর্ণব দাস, বারাকপুর: বরাবরের মেধাবী। লক্ষ্য ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পাড়ার ছোট্ট মেয়েটি লক্ষ্যপূরণ করতেও পেরেছিলেন। কিন্তু অকালেই ছন্দপতন। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ট্রেনি চিকিৎসকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তাঁর পরিবার। হতাশ প্রতিবেশীরাও। চোখের জল বাঁধ মানছে না তাঁদের।
ওই ট্রেনি চিকিৎসক উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের নাটাগড়ের বাসিন্দা। মৃত চিকিৎসকের বাবা পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী। মা গৃহবধূ। দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি। আদিবাড়ি সোদপুরের মহেন্দ্র নগরে। পরবর্তীতে তাঁরা নাটাগড় কদমতলায় বসবাস শুরু করেন। সোদপুর চন্দ্রচূড় বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পড়াশোনা শুরু করেন। দ্বিতীয় বর্ষের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বরাবর শান্ত ও মিশুকে স্বভাবের ছিলেন ওই চিকিৎসক। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সেমিনার হলে শুক্রবার তাঁর ক্ষতবিক্ষত অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়।
প্রতিদিন বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাতায়াত করতেন। সম্প্রতি চারচাকা গাড়িও কিনেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে আর জি কর হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে গাড়ি নিয়েই গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ তাঁর বাড়িতে দুঃসংবাদ পৌঁছয়। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যান। মেয়ের মর্মান্তিক পরিণতির কথা জানতে পারেন। সোদপুর নাটাগড় এলাকাটি পানিহাটি পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সোমনাথ দে পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলরও। তাঁর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ দেবনাথ পরিবার।
সোমনাথবাবুও মৌমিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে বিধায়ক নির্মল ঘোষের সঙ্গে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যান। তিনি জানান, “শেখর দেবনাথকে হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয়েছিল মেয়ে খুবই অসুস্থ। এই খবর পেয়ে আমরা গিয়ে দেখি অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। গলায় আঘাতের চিহ্ন। মুখে রক্তের দাগ। হাত-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ন। এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” মৃতের পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ফোনে কথা বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
পাড়ার মেয়ের এভাবে মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না বাসিন্দারা। তাই শুক্রবার সকালে চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই একে একে এলাকার অনেকেই যেতে শুরু করেছেন আর জি কর হাসপাতালে। শোকস্তব্ধ মৃতার প্রতিবেশী কৃষ্ণা দে। বলেন,”প্রথমে শুনেছিলাম আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ও আত্মহত্যা করার মেয়ে না। পাড়ার এত ভালো একজন মেয়ে আর নেই, এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।” আরেক প্রতিবেশী প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী বলেন, “খুবই ভালো মেয়ে, শান্ত স্বভাবের। ছোটবেলা থেকে ওকে চিনি। পড়াশোনাতেও খুবই ভালো। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকত। গোটা ঘটনা মানতে পারছি না।”