• শিল্পের স্বপ্ন নিয়েই শেষযাত্রায় বুদ্ধ, মনখারাপ সিঙ্গুরের, কী বলছেন সেই মাস্টারমশাই?
    প্রতিদিন | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • সুমন করাতি, হুগলি: শেষযাত্রায় চলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ‘বুদ্ধবাবু’র প্রয়াণে মনভারী রাজ্যের বাসিন্দাদের। মনখারাপ সিঙ্গুরেরও। চোখের কোণা ভিজেছে সিঙ্গুরের সেই মাস্টারমশাইয়েরও। বলছেন, ‘বুদ্ধবাবু’ মানুষ হিসাবে খুবই ভালো ছিলেন। কিন্তু তাঁর দলের ভাবনা ঠিক ছিলনা।

    সিঙ্গুরে টাটাদের মোটরগাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। জমি দিতে নারাজ কৃষকরা ‘কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’ গড়ে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে দাঁড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনই ৩৪ বছরের বাম শাসনের ভিত নড়িয়ে দেয়। ‘ব্যর্থতা’-র দায় এসেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দিকেই। এর পরই রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদল। টাটাদের অন্যত্র চলে যাওয়া। গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। কিন্তু তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতি আজও রয়ে গিয়েছে হুগলির সিঙ্গুরের মাটিতে।

    বুদ্ধ সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ওরফে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই। বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবরে মন ভারাক্রান্ত মাস্টারমশাইয়ের। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের খুব বেশি আলাপ হয়নি। তবে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। আন্দোলনের সময় ব্যক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কোনও সমালোচনা করিনি। কিন্তু জমি আন্দোলনের ক্ষেত্রে তাঁর দলের নীতির বিরোধিতা করি। বুদ্ধবাবুর সততা, নিষ্ঠাকে সম্মান করি।” পাশাপাশি টাটাদের মোটরগাড়ি প্রকল্প হতে পারত, কিন্তু সিপিএমের জন্যই তা হয়নি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি এবং তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম রায় একটা সমঝোতার পথ খুঁজে বার করেছিলেন। যেটুকু জমি স্বেচ্ছায় পাওয়া গিয়েছে সেখানে টাটারা কারখানা করবে। এবং অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে। সেই চুক্তি যদি সিপিএম মেনে নিত তাহলে সিঙ্গুরে শিল্প হত। কিন্তু সেই সময় তাঁর দল এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।”

    রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাজার বিরোধিতা থাকলেও তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর কেমন যেন চুপ হয়ে গিয়েছে সিঙ্গুর। আন্দোলন,পক্ষ, বিপক্ষ ভুলে অনেকেরই স্মৃতির চিলেকোঠায় ‘বুদ্ধবাবু’। রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর দলের নীতি সিঙ্গুরের মানুষ মেনে নিতে পারেননি। সাধারণ মানুষ গর্জে উঠেছিল। গোটা বিষয়টি যে ভাবে তাঁর দল পরিচালনা করেছিল তাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে ভাবে রাজ্য চালাতেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।” কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। শেষ জীবন পর্যন্ত অনাড়ম্বর জীবনযাপন করে গিয়েছেন।” চির বিদায় নিয়েছেন স্বপ্নদ্রষ্টা। মিলিয়ে দিয়ে গিয়েছেন সকল পক্ষকে। বিরোধভুলে সবার মুখে একটায় কথা, ‘বুদ্ধবাবু সৎ ছিলেন।’
  • Link to this news (প্রতিদিন)