• ‘তপন একটা সিগারেট হবে…’আর বলবেন না কেউ! ফুলে ঢাকা দেহ, লাল সেলাম কমরেড বুদ্ধদেব
    হিন্দুস্তান টাইমস | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • 'ভীষণ ভালোবাসতেন সিগারেট খেতে'…সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর সেসব মনে হয় ঠিকঠাক মানতেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই কলেজবেলা থেকে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাম রাজনীতির সঙ্গে। আর প্রেম ছিল সিগারেটের সঙ্গে। টেনশনে, কিংবা আনন্দে যখনই হোক সিগারেটটা চাই। সাদা ধুতি পাঞ্জাবি, চোখে চশমা এই ছবিটাই গেঁথে গিয়েছিল আমজনতার মনে। তবে কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে চলত সিগারেট। নানা সময়ে ব্র্য়ান্ড বদলেছে। কিন্তু নেশাটা থেকেই গিয়েছে। 

    সিওপিডির রোগী। স্বাভাবিকভাবেই সিগারেট খাওয়া বারণ ছিল। কিন্তু তার মধ্য়েই মাঝেমধ্য়েই সিগারেট ছাড়া চলত না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন তপন পাইক। সেই তপনকেই মাঝেমধ্যেই বলতেন তপন একটা সিগারেট হবে। কিন্তু শেষ দিকে সিগারেট ছুঁতে বারণ করেছিলেন চিকিৎসকরা। সেই মতো সিগারেট দেওয়া বারণ ছিল। শরীরের অবস্থা আর চিকিৎসকদের বারণ। সিগারেট দেননি তপন। 

    বুদ্ধবাবু আর নেই। খালি খালি লাগবে পাম অ্যাভিনিউয়ের ওই ছোট্ট ঘরটায়। গত কয়েক বছর ধরে ওই ঘর থেকে বিশেষ বের হননি বুদ্ধদেব। মাঝেমধ্যে পার্টির নেতারা যেতেন। তবে ইদানিং আর বিশেষ কারোর সঙ্গে দেখা করতেন না। শরীর খারাপ ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। তবু তো ছিলেন। বহু পার্টিকর্মীর কাছে তিনি ছিলেন ছাতার মতো। 

    বৃহস্পতিবার শেষ বার বেরিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। ঠান্ডা নিথর দেহ। ফুলে ফুলে ঢাকা। কাঁদছেন প্রিয়জনরা। সেই প্রিয়জনদের মধ্য়ে যেমন রয়েছেন আত্মীয় বন্ধুরা, তেমনি রয়েছেন প্রতিবেশীরা। অনেকে হারালেন তাঁদের প্রিয় কমরেডকে। অনেকে হারালেন এক আপাদমস্তক সৎ মানুষকে। নানা ক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়তো ভুল ছিল, কিন্তু বাংলার উন্নতিতে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কোথাও খামতি ছিল না। 

    তবু তো ছিলেন মানুষটা। গোটা বাংলা জুড়ে যখন একের পর এক দুর্নীতির খবর, নেতা মন্ত্রীরা ধরা পড়ছে চাকরি চুরির অভিযোগে, রাজপথে কাঁদছেন বঞ্চিতরা, সব কিছু মনে হল শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখনও অনেকের মনে হত আবার হয়তো ফিরে আসবেন সেই সাদা চুলের মানুষরা। মনের কোণে ক্ষীণ আশা। শূন্য সিপিএম ভোটের আগে বার বার তুলতেন বুদ্ধদেবের কথা। সেই বুদ্ধদেব আজ আর নেই। চিরবিদায়। এনআরএসে তাঁর দেহ দান করা হয়েছে। আরামবাগ কিংবা বাঁকুড়া লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন যাঁরা, যাঁরা দেখা পেলেন, অথবা দেখা পেলেন না শেষ বারের জন্য তাঁদের প্রিয় নেতাকে, তাঁরা অস্ফুটে বলে উঠলেন লাল সেলাম কমরেড!  
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)