• আদর্শ বিদ্যামন্দিরে বাংলা পড়াতেন, খুনের হুমকি দিয়ে স্কুলটা জ্বালিয়ে দেয় নকশালরা
    বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ধুতি-পাঞ্জাবি পরা সুদর্শন বাংলার শিক্ষকটি যে সিপিএমের যুব নেতা তা জেনে গিয়েছিল নকশালরা। তারপরই আসতে থাকল প্রাণনাশের একের পর এক হুমকি। দমদম তখন নকশালদের ঘাঁটি। ওই এলাকার অতি বাম নেতারা আর জনাকয়েক স্কুল ছাত্রের কাছ থেকে পেলেন হুমকি। সাময়িক স্কুল আসা বন্ধ করতে হল। তার কয়েক দিনের মাথায় বাঁশের দরমা ও টিনের চালের স্কুল বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হল। এই ঘটনার পর পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে গেল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শিক্ষকতা। প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সে সময়ের সহকর্মীদের স্মৃতিতে সে দিনের সব কাহিনি জীবন্ত-

    ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর। দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শেঠ বাগান এলাকায় জমিদার চৈতন্য শেঠের বাড়ির বারান্দায় এলাকার কয়েকজন শুরু করলেন শিশুদের পড়ানোর স্কুল। পরে শেঠেদের জমিতে কলোনির বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বাঁশ ও টালি দিয়ে তৈরি হল শেঠবাগান আদর্শ বিদ্যামন্দির। সরকারি অনুমোদনও পায় বিদ্যালয়টি। ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে এই স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এখনও রেজিস্টার্ড খাতায় শিক্ষক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সই দেখা যায়। প্রথম মাসে সই করে মাইনে তুলেছিলেন ১১৩ টাকা ৫০পয়সা। ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন স্কুলে। ’৭০ সালের জানুয়ারি মাসে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সুকুমার কুণ্ডু। এখন তাঁর ৭৩ বছর বয়স। সেই সুকুমার কুণ্ডু বললেন, ‘স্কুলে দেখতাম সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবি পরা এই শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলে পিন পড়ার আওয়াজ পাওয়া যেত না। পঠন পাঠনের পাশাপাশি সমসাময়িক সাহিত্য নিয়েও গল্প করতেন। রাশভারী মানুষটির সামনে সম্ভ্রমে সরে যেত পড়ুয়ারা। আবার সেই শিক্ষক টিচার্স রুমে অন্য মানুষ। সিগারেট ধরাচ্ছেন। রাজ্য, দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। দ্রুত তিনি বুদ্ধদা হয়ে গেলেন। এভাবে চলছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে বদলে গেল পরিস্থিতি। এলাকার কিছু নকশাল নেতা ও স্কুলের কয়েকজন পড়ুয়া বুদ্ধদা সহ অন্যান্য শিক্ষকদের খুনের হুমকি দিল। তারপর স্কুল আগুন দিয়ে দিল পুড়িয়ে। ওই সময়ই বুদ্ধদা সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করলেন।’ 

    সুকুমারবাবু জানান, ২০০০ সালে স্কুলের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল। বুদ্ধদা তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আমরা চার শিক্ষক দেখা করতে মহাকরণে গিয়েছিলাম স্যুভেনিরের জন্য। আধঘণ্টা ধরে চেম্বারে বসিয়ে চা খাইয়ে জমাটি আড্ডা দিলেন। কে বলবে বুদ্ধদা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর মতো মানুষের বড্ড অভাব। মন ভারাক্রান্ত আমাদের। তৎকালীন স্কুল পরিচালন সমিতির কোষাধ্যক্ষ ননী দে বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে ওঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। জ্ঞান ছিল অপরিসীম। আজ আমরা স্বজন হারানোর ব্যথায় কাতর।’
  • Link to this news (বর্তমান)