• রাজাকারদের প্রশ্নের মুখে দেশ ছেড়েছিলেন, ভাইয়ের চিন্তায় এখন ঘুম উড়েছে নীরদের
    বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বনগাঁ: ‘যে দেশটার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করলাম। সেই দেশটা নিজেদের মধ্যে মারামারি, খুনোখুনি করছে! দেখে ভালো লাগে না। কী হবে দেশের? চিন্তা হয় ভাইটার জন্য। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওখানে কী করছে কে জানে?’ 

    টিনের চালের এক চিলতে ঘর। তার বারান্দাটা এক ফালি। সেখানে মাথায় হাত দিয়ে বসে ৮১ বছরের নীরদ বিশ্বাস। তাঁর পায়ে গুলির ক্ষতচিহ্ন। তা স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির মতো দগদগে। ’৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। তখন ২৮ বছরের তরতাজা যুবক তিনি। থাকতেন ফরিদপুরে। বর্তমানে সে বাড়ি নেই। বস্তুত কিছুই নেই। আছে শুধু দেশভিটেতে ফেলে আসা ভালো-মন্দ কিছু স্মৃতি। সেই স্মৃতিতে এখনও বিভোর নীরদবাবু। দেশ ছেড়েছেন বহু আগে। এখন থাকেন বনগাঁর বলিদাপুকুর গ্রামে। সেখানে এক চিলতে বাড়িতে বসে বলছিলেন কথা। ’৭১ সালে শরণার্থী হিসেবে ভারতে চলে আসেন। বিধাননগরে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কল্যাণীতে মিলিটারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানতে পেরে চলে আসেন। তবে ১০ দিন পর ফিরেও চলে এলেন। কিছুদিন পর আবার মাইকে প্রশিক্ষণের ঘোষণা শুনে একটা পাউরুটি হাতে নিয়ে লরিতে উঠে পড়েছিলেন। রাত আটটার ট্রেনে চেপে সোজা বিহারের মিলিটারি ক্যাম্পে। দেড় মাসের ট্রেনিং। তা শেষ করে ফিরলেন কল্যানী। সেখান থেকে বাগদার বয়রায় গিয়ে ১০ দিন থাকলেন। তারপর যশোরের তালকোরি। দেশ স্বাধীন করতে লড়াই শুরু করলেন। একাধিক যুদ্ধে অংশ নিলেন। সে সব বারুদ মাখা স্মৃতি নীরদ বিশ্বাসের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভোলেননি। কোনওদিন ভুলতে পারবেনও না। সেই দেশের বর্তমান অবস্থা উদ্বিগ্ন করছে তাঁকে। অশান্ত হয়ে পড়ছে মন।

    পরে মুজিব হত্যা হল। তারপর রাজাকারদের অত্যাচারের মুখে পড়তে হল নীরদকে। বললেন, ‘যুদ্ধ শেষে কয়েকজন রাজাকারকে ক্যাম্পে এনে মারধর করেছিলাম। তারা আমাকে চিনে রেখেছিল। মুজিবের মৃত্যুর পর এসেছিল। বলেছিল, ওই চাড়াল তোর রাইফেল কোথায়? এরপরই আমার মা প্রাণনাশের আশঙ্কায় ভারতে পাঠিয়ে দেয় আমাকে।’ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘হাসিনা কী চাইলেও কোনওদিন দেশে ফিরতে পারবেন?’ 
  • Link to this news (বর্তমান)