ঘরে লুকিয়ে বুদ্ধ! প্রাণরক্ষা করেন 'কংগ্রেসি গুন্ডা'
এই সময় | ১০ আগস্ট ২০২৪
১৯৭০ সাল। কলকাতায় তখন নকশালদের দাপট। চারিদিকে রোজ খুনোখুনি। উত্তর কলকাতায় অলিগলিতে বোমা-গুলির লড়াই লেগেই থাকত। নকশালদের ভয়ে অধিকাংশ সিপিএম নেতা তখন এলাকাছাড়া। নকশালরা তাঁর উপরেও হামলা চালাতে পারে, এই ভয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও বাড়িতে থাকতেন না। বাইরে আত্মগোপন করে থাকতেন।একদিন বিশেষ দরকারে গোপনে বাড়ি ফিরেছিলেন। সে খবর জানতে পেরে শ্যামপুকুর তেলিপাড়া লেনে তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে নকশালরা। সেই সময়ে স্কটিশ চার্চ কলিজিয়েট স্কুলের এক শিক্ষকের অনুরোধে বুদ্ধদেবের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তৎকালীন ‘কংগ্রেসি গুন্ডা’ হিসেবে পরিচিত দেবাশিস সেন এবং হেমেন মণ্ডল। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু সে দিনের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি তাঁরা।
সত্তরের দশকে কংগ্রেসের দাপুটে ছাত্রনেতা দেবাশিস সেন কলকাতা পুরসভার চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে এখন ওএসডি হিসেবে কাজ করছেন। অতীতের স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘তখন আমি স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি। ছাত্র পরিষদের কলকাতা জেলা কমিটির সহ-সভাপতিও।
তখন স্কটিশ চার্চ কলিজিয়েট স্কুলের কেমিস্ট্রির টিচার ছিলেন নেত্ররঞ্জন সেনগুপ্ত। ছোটবেলায় বুদ্ধবাবু ওঁর কাছে পড়তে যেতেন। সে জন্য বুদ্ধবাবুকে খুব স্নেহ করতেন। একদিন তিনি বিডন স্ট্রিটে আমাদের পার্টি অফিসে হাজির। বললেন, বুদ্ধ আমার ছাত্র। ওর বাড়ি ফেলেছে নকশালরা। ওকে যে কোনও ভাবেই হোক উদ্ধার করতে হবে। নইলে নকশালরা ওকে প্রাণে মেরে ফেলবে।’
দেবাশিস প্রথমে না করে দিলেও বারবার রিকোয়েস্ট করায় ‘স্যরের’ ফেলতে পারেননি। তখনকার দুই বিখ্যাত গুন্ডা হেমেন মণ্ডল এবং জং বাহাদুর সিংকে নিয়ে বুদ্ধবাবুকে উদ্ধার করে আনেন। বাড়ি চেনানোর জন্য নেত্ররঞ্জনকেও গাড়িতে তুলে নেন। দেবাশিস বলেন, ‘বুদ্ধবাবু প্রথমে ভয়ে ঘর থেকে বেরোতেই চাইছিলেন না। ভেবেছিলেন নকশালরা হয়তো ওঁকে অ্যাটাক করতে এসেছে। স্যর অনেক ডাকাডাকি করার পরে বুদ্ধবাবু ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
ওঁকে নিয়ে প্রথমে বিডন স্ট্রিট পার্টি অফিসে আসি। তারপর ওঁর অনুরোধে একটা জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসি। ওই এলাকার কুখ্যাত নকশাল নেতা ছিলেন পাণ্ডেশ্বর মুখোপাধ্যায়। যিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হেমন্ত বসুর হত্যাকাণ্ডে অন্যতম প্রধান আসামি ছিলেন। তিনি আমাকে সমীহ করতেন। সে জন্য আমাদের খুব একটা অসুবিধের মুখে পড়তে হয়নি।’
এক সময়ের উত্তর কলকাতার ত্রাস হেমেন মণ্ডলের কথায়, ‘তেলিপাড়া লেনে ঢুকলে নকশালরা আমাদের পাল্টা অ্যাটাক করতে পারে, এই ভয়টা ছিল। আমরা অবশ্য প্রস্তুতই ছিলাম। আমাদের সঙ্গে ২০-২৫ জন অ্যাকশনের ছেলে ছিল। বোমা-রাইফেল ছাড়াও ছিল সেনাবাহিনীর গ্রেনেড। পাণ্ডবেশ্বর সেটা ভালো করেই জানত। তাই ওরা আমাদের আটকানোর সাহস পায়নি। পরবর্তীকালে রুনু গুহনিয়োগী (লালবাজারের পুলিশকর্তা) আমাকে বলেছিলেন, তোরা যদি সে দিন উদ্ধার না-করতি, তা হলে বুদ্ধবাবুকে নকশালরা সে দিন প্রাণে মেরে দিত।’