২৭ জঙ্গির দল এ রাজ্যে ঢুকতে চাইছে, বিএসএফকে সতর্ক করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া পাঁচ মহিলা সহ কুখ্যাত ২৭ জঙ্গি এপারে ‘অনুপ্রবেশ’-এর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে। গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন, এদের মধ্যে এমন বেশ কয়েকজনকে নির্দিষ্ট ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ দিয়ে ভারতে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, যারা এপার সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালু থাকা জঙ্গি মডিউল ও স্লিপার সেলকেই দায়িত্ব দিয়েছে আইএসআই। কারণ, ক্যাডার নিয়োগের মতো কাজ যারা আগে ‘সাফল্যে’র সঙ্গে করেছে। জঙ্গিদের এই দলে রয়েছে আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস), জেএমবি, জামাত, আনসার আল ইসলামের মতো সংগঠনের সদস্যরা। তবে সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ, পলাতক জঙ্গিদের এই দলে থাকা দু’টি নাম—আল কায়েদার আবু তালহা এবং জেএমবির সোহেল মাফুজ। ভারতে আল কায়েদার মডিউল তৈরির অন্যতম কারিগর তালহা, আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ও ঢাকার হোলি আর্টিজেন কাফে হামলার অন্যতম অভিযুক্ত এই সোহেল। এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বিএসএফকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—যে কোনও অজুহাতই সামনে আনা হোক না কেন, অনুপ্রবেশকারীদের রুখতেই হবে।
আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও নিষিদ্ধ জামাত বাংলাদেশে ‘অবাধ’ বিচরণ শুরু করেছে। বাকি সংগঠনগুলি দু’পারেই নিষিদ্ধ। গোয়েন্দারা বলছেন, শুধু এই জঙ্গিরাই নয়, জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া অপরাধের নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত আরও প্রায় ১২০০ অপরাধী সীমান্ত পেরিয়ে এপার বাংলায় ঢোকার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে বিএসএফকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। বিএসএফের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের তরফে সীমান্তে বিশেষ সতর্কতা জারি করার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সজাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সীমান্তে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসএফ জানাচ্ছে—অজানা, অচেনা কাউকে দেখলেই আমাদের জানান। চৌকিগুলিতে দিনরাত পাহারায় জওয়ানের সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। নির্দেশ এসেছে, রাত ৯টার মধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার দোকানপাট বন্ধ করতে হবে। নদী ও বাওরের মতো জল সীমান্তে ব্যাপক টহলদারি শুরু হয়েছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, জুলাই মাসে বাংলাদেশের আন্দোলন পর্ব থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরেও সে দেশের বিভিন্ন অংশে জেল ভাঙা অব্যাহত। পুলিস, আনসার এবং র্যাব ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার কারণেই একের পর এক জেল ভাঙার ঘটনা ঘটছে। নরসিংদি, শেরপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, গাজিপুর ও জামালপুর জেল ভাঙা হয়েছে। জেল ভাঙার চেষ্টা হয় ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় জেল ও চট্টগ্রাম জেলে। সূত্রটি বলছে, ওই অপরাধীরাই এখন সীমান্তে পেরিয়ে এপারে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের জেল ভেঙে যে কুখ্যাত জঙ্গিরা পালিয়েছে, তাদের সিংহভাগই ভারতের মাথাব্যথার কারণ। এদের মধ্যে রয়েছে শেরপুর জেল ভেঙে পালানো একিউআইএসের সেকেন্ড ইন কমান্ড ইমানুল হক ওরফে আবু তালহা এবং তার ভারতীয় স্ত্রী জেএমবির নারীশক্তি ইউনিটের ফারিয়া আফরিন। তালহা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। এপারের এসটিএফের গোয়েন্দারা তাকে ঢাকায় গিয়ে জেরা করেছিলেন। এছাড়াও আনসার আল ইসলামের নিয়ামাতুল্লা (হরিদেবপুরের জঙ্গি মডিউলের মাথা) ও তার দুই শাগরেদ আব্দুল আলিম ও জাকারিয়া মণ্ডলও জেল ভেঙে পালিয়েছে।