• মহিলা চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার আর জি করে
    বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইমার্জেন্সি বিভাগের চারতলা। ডানহাতে একদম শেষ মাথায় চেস্ট ডিপার্টমেন্টের বিশাল সেমিনার হল। ঘরের ভিতর কাঠের পোডিয়াম। তার উপরেই অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন মহিলা। ডানহাত মাথার উপরে। চোখ, মুখ ও যৌনাঙ্গে রক্ত। গলায় আঘাত। শরীরের ১১টি জায়গায় ক্ষতচিহ্ন। নিম্নাঙ্গে কোনও পোশাক ছিল না। সেগুলি পাশে ছিল। দেহটি পড়ে ছিল নীল তোষকের উপর। মাথার কাছে খোলা ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ভাঙা চশমা, চুলের ক্লিপ। শুক্রবার খাস কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে এই অবস্থাতেই মিলল ওই চিকিৎসকের মৃতদেহ। সংবাদমাধ্যমে মৃতার পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও সেই ইঙ্গিত করছে। বলা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে চিকিৎসককে। এরপরে গলা টিপে খুন করা হয়। গলার হাড় ভাঙা ছিল।  এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার গভীর রাতে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিস। 

    সরকারি হাসপাতালের ভিতরেই কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন— সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না তাবড় পুলিসকর্তারা। আপাতত খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা। গঠন হয়েছে সিট। জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক সোদপুরের নাটাগড়ের বাসিন্দা। এমডি পড়ছিলেন। আর জি কর হাসপাতালে চেস্ট ডিপার্টমেন্টে কর্তব্যরত। টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করছিলেন। বৃহস্পতিবারও নাইট ডিউটি ছিল তাঁর। সঙ্গে ছিলেন একজন ইন্টার্ন। মৃতার মা জানিয়েছেন, ‘রাত ১১টা নাগাদ মেয়ে ফোন করেছিল। সেটাই শেষ কথা।’ ওই ইন্টার্ন রাত ২টো নাগাদ শেষবার চিকিৎসককে দেখেন। তখন সেমিনার হলেই ছিলেন তিনি। সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের আরও তিনজন যুবক। প্রত্যেকেই চিকিৎসকের জুনিয়র। সূত্রের খবর, নাইট ডিউটি থাকলে মাঝেমধ্যেই সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যেতেন যুবতী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ যুবতীকে অবস্থায় সেই ঘরের পোডিয়ামের উপরেই পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর এক সহকর্মী। খবর পেয়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় টালা থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি কর চত্বর। চারতলার ওই সেমিনার হলের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এমডি পড়ুয়ারা। প্রাথমিকভাবে পুলিসকে দেহ তুলতে বাধা দেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের দাবি তোলেন তাঁরা। তিনজনের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে দেহ বের করার সময়ও চলে তুমুল বিক্ষোভ। খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি পড়ুয়াদের পাশাপাশি সমস্ত জুনিয়র চিকিৎসকরা লাগাতার ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত, রাত ৩টে থেকে ভোর ৬টা— এই তিনঘণ্টার মধ্যে খুন হয়েছেন চিকিৎসক। মৃতার ফোন থেকে শেষ কার কার সঙ্গে কথা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক আধিকারিকরা। সন্ধ্যায় সেমিনার হলে নামানো হয় স্নিফার ডগ। মৃতার মায়ের অভিযোগ, ‘মেয়ে সবার সেবা করতে এসেছিল। কিন্তু ওরা খুন করে দিল। ওর শরীরে জামাকাপড় ছিল না। সেমিনার হলে ক্যামেরা নেই। আমি চাই দোষীরা শাস্তি পাক।’

    ঘটনার কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম থেকে ফোনে যোগাযোগ করেন মৃতার পরিবারের সঙ্গে। যুবতীর মায়ের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন পুলিসের উপর ভরসা রাখতে। দোষীরা শাস্তি পাবেই।’ দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েল সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। স্বাস্থ্যদপ্তরের সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও কথা বলেন মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিভাগীয় তদন্তের জন্য ১১ জন চিকিৎসকের কমিটি গঠিত হয়েছে। রাত ২টোর পর ওই সেমিনার হলে কী হয়েছিল? রহস্য লুকিয়ে সেখানেই।
  • Link to this news (বর্তমান)