• জনপ্লাবনে ভেসে যাত্রা শেষ এনআরএসে, বিদায় বুদ্ধদেব
    বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: লাইন ঠেলে মুজফফর আহমেদ ভবনের ভিতরে আর যাওয়া হয়নি। কিন্তু জীবনের আইকন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষবারের মতো নিজের চোখে দেখবেন না! ভিড় ঠেলে কোনওমতে এনআরএসের সামনে পৌঁছলেন হুগলির সুতীর্থ গুপ্ত। গলায় ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অমর রহে’ স্লোগান। অর্ধনমিত ‘রক্ত পতাকা’র স্রোত ঠেলে প্রবেশ করল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিথর দেহ। আর থাকতে পারলেন না তরুণ। কাঁপা গলায় স্লোগান, ব্যারিকেড ঠেলে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে। ঠিক তখনই নেতৃত্ব এসে বললেন, পলিটব্যুরো সদস্য ছাড়া কেউ ভিতরে যাবেন না। অগত্যা...। ধরা গলায় বললেন, ‘একটু হলেও তো দেখতে পেলাম। জীবন স্বার্থক।’

    সুতীর্থ এখানে এক প্রতীক মাত্র। সেই অগণিত মানুষের প্রতিনিধি, যাঁরা পা মেলালেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অন্তিম যাত্রায়। তাঁদেরই স্লোগান, আর ইন্টারন্যাশনাল গানের সুরে ভেসে শুক্রবার বিকেলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মরদেহ পাড়ি দিল এনআরএসের দিকে। উদ্দেশ্য, দেহদান। বুদ্ধদেববাবু চেয়েছিলেন, তাঁর দেহ যেন চিকিত্সার কাজে ব্যবহৃত হয়। সেই শেষ ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই যেন এদিন সকাল থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে জনস্রোত। কারও হাতে গোলাপ, কারও মালা-পোস্টার-ছবি। চোখ ছলছলে। কোনও বাবার কাঁধে ছোট্ট সন্তান। সিপিএমের রাজ্য দপ্তর থেকে ফুটপাত ধরে লাইন চলে গিয়েছিল মৌলালি পর্যন্ত। একটা সময় বন্ধ করে দিতে হয় এ জে সি বোস রোড। মাঝেমধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে তাল কাটছিল। প্রিয় নেতাকে দেখে চোখের জল আটকাতে পারলেন না অনেকে। মীরা ভট্টাচার্য পরম যত্নে মুছে দিচ্ছিলেন স্বামীর কপাল। 

    শুরুতেই আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেববাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানান পলিটব্যুরো সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন প্রকাশ কারাত, হান্নান মোল্লা, মানিক সরকার সহ সিপিএমের একাধিক রাজ্য-জেলা নেতৃত্ব, সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু থেকেও অসংখ্য মানুষ এসেছিলেন। ভিড়ের চাপে কাচের গাড়িটি রাজ্য দপ্তরে নিয়ে আসতে বেগ পেতে হল সুজন চক্রবর্তী-মহম্মদ সেলিমদের। 

    সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলেছে। অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দীনেশ মজুমদার ভবনে। পৌনে চারটে নাগাদ শেষবারের মতো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছাড়লেন আলিমুদ্দিন। সামনে আশিটি অর্ধনমিত রক্তপতাকা। রয়ে গেল তাঁর সিপিএম, আর যাঁর হাত ধরে পার্টিতে আসা... সেই বিমান বসু। কথা ছিল, ডিওয়াইএফআই-এসএফআইয়ের রাজ্য দপ্তরে দেহ রাখা হবে। সেখানে তখন ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সৃজনরা। বাধ্য হয়ে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, আপনারা এনআরএসের দিকে হাঁটুন। ছাত্র-যুবর আবেগের সামনে সেই বার্তাও যেন থমকে গেল। দেহ নামানো গেল না দীনেশ মজুমদার ভবনে। গাড়ি চলল এনআরএসে। সেখানে উপস্থিত শশী পাঁজা, অতীন ঘোষ, শান্তনু সেন। নিউটাউনের বৃদ্ধ নিত্য ঠাকুর একা একা ইন্টারন্যাশনাল গেয়ে চলেছেন। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত নয়, এনআরএসের গেটের দিকে তাকিয়ে জোড় হাতে প্রণাম করে ছুটলেন ট্রেন ধরতে। 
  • Link to this news (বর্তমান)