দুর্ঘটনা কমাতে বাসন্তী রাজ্য সড়কে ভ্যানো বন্ধে অভিযান পুলিশের
এই সময় | ১০ আগস্ট ২০২৪
এই সময়, ভাঙড়: মৃত্যুফাঁদ বাসন্তী রাজ্য সড়ক! নিত্যদিন একের পর এক দুর্ঘটনা লেগেই আছে। দুর্ঘটনার বড় কারণ রাজ্য সড়কে ইঞ্জিন ভ্যান বা ভ্যানোর দাপাদাপি। ব্যস্ততম রাজ্য সড়কে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রিবাহী ভ্যানো চলে কয়েক হাজার। এই গাড়িগুলির না আছে হর্ন, না আছে হেডলাইট। ভ্যানোর চারাপাশে পা ঝুলিয়ে বসেন যাত্রীরা। তাই একবার সংঘর্ষ বা ব্রেক ফেল হলেই ভ্যানো থেকে ছিটকে পড়েন যাত্রীরা।তাই রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে এ বার ভ্যানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও বেআইনি ভাবেই যাত্রী বহন করছে ভ্যানো। তাই অবৈধ ভ্যানো ধরতে এ বার আসরে নেমেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক (সাউথ) অমিত কুমার সাউ বলেন, ‘ভাঙড়ের ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে এবং দুর্ঘটনা কমাতে ভ্যানো চালকদের সতর্ক করা হয়েছে যাত্রী পরিবহণ না করার জন্য। কথা না শুনলে আমরা ভ্যানো আটক করে মামলা চালু করব।’
বেশ কিছু দিন ধরে বাসন্তী রাজ্য সড়কের ঘটকপুকুর, পাগলাহাট, বিবিরাইট, পদ্মপুকুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ইঞ্জিন ভ্যান থেকে সাধারণ যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের বক্তব্য, ভ্যানোতে মালপত্র বহন করা যাবে, যাত্রী নয়। এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে ভাঙড়ে। সাধারণ মানুষ অনেক কম খরচে ইঞ্জিন ভ্যান করে যাতায়াত করতে পারেন।
বহু শ্রমিক ভ্যানো করে বানতলা চর্মনগরীতে প্রতিদিন কাজে যান মিনাখাঁ, ভাঙড়, হাড়োয়া, জীবনতলা, সোনারপুর থেকে। এই ঘটনায় ওই শ্রমিকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন বহু সাধারণ মানুষও। তাঁদের বক্তব্য, কাটা তেলে চলা ভ্যানোর জন্য পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অধিকাংশ ভ্যানোতে আলো, ব্রেক, ধরার হাতল ঠিকমতো না থাকায় যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
কলকাতার ইএম বাইপাসের সায়েন্স সিটি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী পর্যন্ত প্রায় সত্তর কিমি জুড়ে এই রাস্তার বিস্তৃতি। কলকাতা পুলিশের আনন্দপুর, লেদার কমপ্লেক্স, পোলেরহাট, ভাঙড় থানা ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার তিনটি থানা নিয়মিত নজরদারি চালায় এই রাস্তার উপর। শুধু সুন্দরবনই নয়, এই রাস্তা ধরে বসিরহাট, হাসনাবাদ, টাকি, হিঙ্গলগঞ্জ, ন্যাজাট, সন্দেশখালি, ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, ধামাখালিতেও যাওয়া যায়।
তাই রুটিরুজির জন্য বাস, ট্রেকার, অটো, ম্যাজিকের পাশাপাশি সস্তায় যোগাযোগের জন্য নিত্যদিন ভ্যানো, টোটো চাপেন সাধারণ মানুষ। ভাঙড়ের চণ্ডীপুর থেকে শুরু করে বানতলা চর্মনগরী পর্যন্ত ভ্যানোর দাপট সবচেয়ে বেশি। বানতলা চর্মনগরীর শ্রমিক প্রভাস মণ্ডল বলেন, ‘বাসে যে ভাড়া ২৫ টাকা, ভ্যানোতে সেই ভাড়া ১৫ টাকা। এতে সারা মাসে আমাদের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়।’
পুলিশের দাবি, ভ্যানোতে যাত্রী পরিবহণ নিয়ে গাইডলাইন না থাকায় একসঙ্গে ১০-১৫ জন পা ঝুলিয়ে চারিদিকে গোল হয়ে বসেন। এর ফলে অন্য গাড়িকে পাশ দিতে গেলে বহু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন যাত্রীরা। ভ্যানো চালক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙড়ের মতো গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মানুষ অটো, টোটো, ইঞ্জিনভ্যানের উপরেই নির্ভরশীল। আমরা গরিব মানুষ। ভ্যানো বন্ধ করে দিলে আমাদের মতো অনেকেই না খেতে পেয়ে মরবে।’
ভাঙড়-১ ব্লকের আইএনটিটিইউসির সভাপতি আয়নাল মোল্লা বলেন, ‘আমি পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করব তারা যেন সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখেন।’ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের সঙ্গে চালু হয়েছে ভাঙড় ট্র্যাফিক গার্ড। গত সাত মাসে প্রায় বাইশ-তেইশটি দুর্ঘটনায় সাত-আট জন মারা গিয়েছেন।