• সরকারি চিকিৎসককে মার, কাঠগড়া বিডিও
    এই সময় | ১০ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়, মালদা: সরকারি হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠল মালদার হবিবপুর ব্লকের বিডিওর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে তিনটে নাগাদ হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে এই ঘটনায় আক্রান্ত চিকিৎসক বিডিওর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অভিযুক্ত বিডিও অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি।শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া। বৈঠক শেষে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ী বলেন, ‘জেলাশাসক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত করবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে কম্প্রোমাইজের কোনও জায়গা নেই।’

    জানা গিয়েছে, অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে তিনটে নাগাদ বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়েছিলেন হবিবপুরের বিডিও অংশুমান দত্ত। সেই সময়ে চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন দীপাঞ্জন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘বিডিও সাহেব তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন শুনে বাইরে বেরিয়ে আসি। ওঁর অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে আসতে বলি। এতেই বিডিও ক্ষিপ্ত হয়ে আমার জামার কলার ধরে মারতে শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা বাড়ির লোকজন কোনও রকমে বিডিওকে সরিয়ে নেন।’

    প্রেসার, অক্সিজেন লেভেল পরীক্ষা করে ইনজেকশন ও অক্সিজেন দেওয়ার ঘণ্টা খানেক পরে বিডিওর স্ত্রী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার সময়ে স্বামীর আচরণ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলে বিডিও ফের তেড়ে মারতে আসেন বলে অভিযোগ। ঘটনার সময়ে হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন নার্স অঙ্কিতা মণ্ডল। শুক্রবার সকালেও তাঁর চোখে মুখে আতঙ্ক।

    তিনি বলেন, ‘রাতে হন্তদন্ত হয়ে এক ভদ্রলোক হাসপাতালে ঢোকেন। তিনি নিজেকে বিডিও হিসেবে পরিচয় দেন। বলেন, ওঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখনই দেখতে হবে। বিডিও সাহেবকে এর আগে সামনা সামনি না দেখায় চিনতে পারিনি। আমি একজন রোগীকে ইনজেকশন দিচ্ছিলাম। ততক্ষণে মেডিক্যাল অফিসার দীপাঞ্জন মণ্ডলও বেরিয়ে এসেছেন। তিনি রোগিণীকে হাসাপাতালের ভেতরে নিয়ে যেতে বললে বিডিও সাহেব ডাক্তারবাবুর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চড়, ঘুসি মারার পাশাপাশি অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিচ্ছিলেন। দু’বার তিনি ডাক্তারের উপরে চড়াও হন। শেষে বিডিও সাহেবের সঙ্গে আসা লোকেরাই কোনও ভাবে তাঁকে সরিয়ে নেন।’

    অঙ্কিতা বলেন, ‘হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তা কর্মী নেই। নিরাপত্তা নিয়ে যাঁর দেখার কথা ব্লক প্রশাসনের সেই শীর্ষ কর্তা বিডিও সাহেবই যদি আমাদের উপরে চড়াও হন তাহলে আতঙ্ক তো হবেই।’

    ঘটনার খবর পেয়ে ভোররাতেই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বাবর আলি হাসপাতালে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, রোগীকে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের ভেতরে তো আনতেই হবে। ঘটনার সময়ে বিডিও এবং চিকিৎসক দু’জনেই ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন। বিডিও বলেছেন, চিকিৎসা পেতে দেরি হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের সবাই অন্য কথা বলছেন। সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে।’

    আক্রান্ত চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের কোনও দোষ, ত্রুটি থাকলে বিডিও সেটা বলতেই পারতেন। কিন্তু বিনা কারণে অন্য রোগীদের সামনে তিনি হামলা করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে খুব বাজে মেসেজ গিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে অন্যরকম কিছু ভাবতে হবে।’ ঘটনার প্রতিবাদ করে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • Link to this news (এই সময়)