১৩ বছরের অপেক্ষা শেষ হতো আর মাস তিনেক বাদে। এ ক’টা মাস কাটলেই ডাক্তার-প্রেমিকের সঙ্গে লম্বা সম্পর্ককে ‘বিয়ে’ নামক প্রতিষ্ঠানের শিলমোহর দিতে পারতেন আরজি করের খুন হওয়া চিকিৎসক। প্রস্তুতিও চলছিল জোরকদমে। হয়তো চলছিল দিন গোনা। কিন্তু...খড়দহ থানা এলাকায় তাঁর বাড়ির সামনে এখনও জ্বলজ্বল করছে রেসপিরেটরি মেডিসিনের ওই ডাক্তারের নেমপ্লেট। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাবা-মায়ের ছিল অনেক স্বপ্ন। তার উপরে সামনে যাঁর বিয়ে, তাঁকে নিয়ে আলাদা আবেগ তো থাকবেই। অন্যের বাড়িতে মেয়েকে পাঠানো, সে-ও কি কম কষ্টের? কিন্তু...মেয়েটা যে আর ফিরবেই না!
মেধাবী তরুণীর ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মেডিক্যাল জয়েন্টে বসেছিলেন। সেই সূত্রে ভর্তি হন দমদমের একটি প্রাইভেট কোচিংয়ে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ ব্যারাকপুর পলতার বাসিন্দা ওই যুবকের। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৩ বছর আগের সেই আলাপকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলেন দু’জনেই। তাঁর সেই প্রেমিক এখন নদিয়ার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক।
নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ের জন্য যে যার পরিবারে সম্পর্কের কথা জানান। দুই পরিবার রাজিও হয়ে যায়। কথাবার্তার পরে ঠিক হয়, আগামী নভেম্বরে বিয়ে হবে। সেইমতো চলছিল প্রস্তুতি। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে কোনও খামতি রাখতে চাননি মা-বাবা।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাডে় ১১টা নাগাদ তরুণীর সঙ্গে তাঁর হবু স্বামীর শেষ কথা হয়। ডিউটিতে ছিলেন বলে তখন বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি তরুণী৷ কিন্তু পরেও অনেকটা সময় গড়িয়ে যাওয়ায় প্রেমিকার ফোন না পেয়ে তরুণীকে কল করতে থাকেন যুবক। হোয়াটসঅ্যাপ এবং এসএমএসেও বেশ ক’বার বার্তা পাঠান। উত্তর মেলেনি। যুবক ভেবেছিলেন, ডিউটিতে ব্যস্ত আছেন হবু স্ত্রী৷ কিন্তু এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, স্বাভাবিক ভাবেই সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।
নিহতের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘ও-ই আমাদের পরিবারের বড় মেয়ে৷ ওর বিয়ে উপলক্ষ্যে এক্সাইটমেন্ট ছিল সকলের। সেই মেয়ের যে এমন পরিণতি হবে, সেটা ভাবলেই শিউরে উঠছি।’
এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘আমার দেওয়ালে গা লাগানো বাড়ি ওদের। ওকে ছোট থেকে দেখছি। অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং মিশুকে স্বভাব। ও তো আমারও মেয়েই ছিল! মাস কয়েক আগে নতুন গাড়ি কিনে জোরাজুরি করছিল চড়ার জন্য। বলেছিলাম, পরে একদিন চড়ব। সে সব আজ স্মৃতি হয়ে থেকে গেল।’ ঠিক যে ভাবে স্মৃতি হয়ে থেকে গেল বিয়ের জন্য দু’বাড়ির যাবতীয় প্রস্তুতি।