• আর জি কর কাণ্ডের আঁচ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: আরজিকর কাণ্ডের আঁচ এসে লাগল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তাররা শনিবার আন্দোলনে নামেন। তাঁরা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। ফলে এদিন হাসপাতালের আউটডোরে পরিষেবা বন্ধ ছিল। ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, পিজিটি মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জন জুনিয়র ডাক্তার কাজ না করায় হাসপাতালের ইন্ডোরেও পরিষেবা ব্যাহত হয়। দফায় দফায় আন্দোলনের জেরে এদিন হাসপাতাল চত্বরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারারা জরুরি বিভাগের মেন গেট বন্ধ করে দেন। ফলে রোগীদের পাশের গেট দিয়ে ঘুরপথে জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হয়। তারফলে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। 

    বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা কাজ না করায় পরিষেবা ব্যাহত হয়। আউটডোর পরিষেবা বন্ধ ছিল। তবে সিনিয়র চিকিৎসকদের মাধ্যমে ইন্ডোরে পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চলছে। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তাঁদের দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যদপ্তরকে জানানো হবে।

    আন্দোলনকারী এক ইন্টার্ন বলেন, আরজিকরের মতো ঘটনা যে কোনওদিন বাঁকুড়া মেডিক্যালেও ঘটতে পারে। রাতে আমাদের অসুরক্ষিতভাবে ডিউটি করতে হয়। মদ্যপ অবস্থায় অনেকে ওয়ার্ডে ঢুকে ঝামেলা পাকায়। ডেকেও নিরাপত্তারক্ষীদের সাড়া পাওয়া যায় না। হাসপাতালের বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা খারাপ হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে রেসিডেন্ট রুম তো দূরের কথা ভালো বাথরুমও নেই। এদিন দাবিদাওয়া কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ সময় মেডিক্যাল অফিসার ওয়ার্ডে আসেন না। সব কাজ আমাদের দিয়ে করানো হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে রোগীর আত্মীয়দের যাবতীয় রোষও আমাদের উপর এসে পড়ে। বারবার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।  

    মেডিক্যালের আউটডোরে প্রতিদিন কয়েকশো রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। বাঁকুড়ার পাশাপাশি লাগোয়া পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম থেকেও অনেকে আউটডোরে চিকিৎসা করান। তাঁরা এদিন পরিষেবা না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। আন্দোলন প্রত্যাহার করা না হলে সোমবারেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে রোগীরা চিন্তায় রয়েছেন। হাসপাতালের ইন্ডোরে ভর্তি রোগীর আত্মীয়রাও উদ্বেগে রয়েছেন। এদিন শালতোড়ার বাসিন্দা অমল দাস আউটডোরে চিকিৎসার জন্য আসেন। তিনি বলেন, এত দূর থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাদের মতো গরিবগুর্বো মানুষগুলিকে বিপাকে ফেলে কার কী লাভ হয়, তা জানি না। তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। 

    ইন্ডোরে ভর্তি রয়েছেন মেজিয়ার এক যুবক। তাঁর বাবা মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত বলেন, ছেলের পেটে অপারেশন হয়েছে। ওয়ার্ডে সিনিয়র চিকিৎসকের সেভাবে দেখা পাওয়া যায় না। জুনিয়র ডাক্তাররাই দু’বেলা ছেলেকে দেখতেন। তাঁরা এদিন থেকে কর্মবিরতি শুরু করায় ছেলের চিকিৎসা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছি।      
  • Link to this news (বর্তমান)