• মায়ের পরকীয়া মেনে নিতে পারেনি, বাবার সঙ্গে মিলে খুন, ধৃত মেয়েও
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, তেহট্ট: মায়ের পরকীয়া সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি কলেজে পাঠরতা মেয়ে। বাধা দিয়েছিল। তার জেরে তাকে মারধর করা হয়। ভিনরাজ্যে কর্মরত বাবাকে সেই কথা জানায় মেয়ে। তারপরই বাবার সঙ্গে মিলে মাকে খুন করে। গৃহবধূ চামেলি বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় শুক্রবার স্বামী শ্যামল বিশ্বাসকে পলাশীপাড়া থানার পুলিস গ্রেপ্তার করেছিল। শনিবার তার মেয়ে শাঁওলি বিশ্বাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এদিনই তাকে তেহট্ট আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।

    প্রসঙ্গত, গত বুধবার পলাশীপাড়ার ঈশ্বরচন্দ্রপুর মাঠপাড়ায় বাড়ি থেকে গৃহবধূ চামেলি বিশ্বাসের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ বছর আগে চামেলির সঙ্গে শ্যামলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্যামলের সঙ্গে চামেলির অশান্তি শুরু হয়। সেই কারণে শ্যামল পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে চলে যায়। মায়ের কাছে থাকত শাঁওলি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চামেলি একাধিকজনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মেয়ে বড় হওয়ার পরেও তা থামেনি। যে কারণে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ওদের বাড়িতে  কিছু হলে কেউ ফিরেও তাকাত না।পুলিস ধৃতদের জেরায় জানতে পেরেছে, মেয়ে বড় হওয়ায় তাকে ফোন কিনে দিয়েছিল শ্যামল। কিন্তু, সেই ফোন থেকেই চামেলি বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে কথা বলতেন। শাঁওলি এসবের প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করা হতো। গত ৩ আগস্ট এনিয়ে প্রতিবাদ করায় শাঁওলিকে ফের মারধর করেন চামেলি। সঙ্গে সঙ্গে শাঁওলি বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। শ্যামল এই কথা শোনার পর স্ত্রীকে ফোন করে। তাতে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়। গত সোমবার শ্যামল বাড়ি ফেরে। মঙ্গলবার সকালে এনিয়ে ফের দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়। চামেলি তাঁর স্বামী ও মেয়েকে মারধর করে। তখনই শ্যামল ভারী বস্তু দিয়ে মারধর চামেলির মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় চামেলি ঘরের মেঝেতে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকেন। প্রায় ঘণ্টা খানেক বেঁচে থাকলেও শাঁওলি বা শ্যামল কেউ তাঁকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। ওই অবস্থায় পড়ে থেকে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরই বাবা ও মেয়ে চুরির গল্প ফেঁদে বাঁচার চেষ্টা করে। আলমারি খুলে ঘর লন্ডভন্ড করে দেয়। টাকা পয়সা,  গয়না ও মোবাইল সরিয়ে দেয়। তারপর শাঁওলির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে বলে তাকে তেহট্ট মহকুমা  হাসপাতালে নিয়ে যায় শ্যামল। সেখানে রাতে ভর্তি থাকে। বুধবার সকালে তারা ফিরে চিৎকার চেঁচামেচি করে জানায়, তাদের ঘরে চুরি হয়েছে। চামেলিকে খুন করা হয়েছে। সেই সময় তাদের বয়ান শুনেই পুলিসের সন্দেহ হয়েছিল। কারণ মৃতদেহ থেকে গন্ধ উঠে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হলে সকালে মৃতদেহ থেকে গন্ধ বের হতো না। শ্যামলকে পুলিস জেরা করতেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। তারপরই  এদিন শাঁওলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।তেহট্ট মহকুমা পুলিস অফিসার শুভতোষ সরকার বলেন, খুনের ঘটনায় মহিলার স্বামী ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে খুনের অস্ত্র সহ বাকি জিনিস কোথায় আছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)