• ডাক্তার ধর্ষণ-খুনে গ্রেপ্তার সিভিক,  আর জি কর কাণ্ডে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ চিকিৎসকদের, কর্মবিরতিতে ভোগান্তি
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাতভর তদন্ত। লাগাতার জেরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতায় অপরাধের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস ঘটনার কিনারা করল পুলিস। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিসের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)। ধৃতের নাম সঞ্জয় রায় (৩১)। কলকাতা পুলিসেরই সিভিক ভলান্টিয়ার। বাড়ি ভবানীপুর। পুলিসের ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে আর জি কর হাসপাতালে ছিল তার নিয়মিত যাতায়াত। এদিন শিয়ালদহ আদালতে পেশ করা হয় সঞ্জয়কে। অভিযুক্তের তরফে সওয়াল করতে রাজি হননি কোনও আইনজীবী। ধৃতকে ১৪ দিন পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। কোর্ট চত্বরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও একজনকে আটক করা হয়। 

    পুলিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর ৪টেয় মদ্যপ অবস্থায় আর জি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ঢোকে সঞ্জয়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে করতে একসময় সে পৌঁছে যায় চারতলায়। চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুমে দ্বিতীয় বর্ষের মহিলা পিজিটিকে ঘুমন্ত দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিযুক্ত। প্রথমে ধর্ষণ করা হয় তরুণীকে। তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সঞ্জয় গলা টিপে ধরে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নির্যাতিতা। এখানেই শেষ নয়, খুনের পরও তাঁকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত। ময়নাতদন্তে তার প্রমাণ মিলেছে।

    শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় ওই তরুণীর অর্ধনগ্ন দেহ। খবর জানাজানি হতেই রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের চিকিৎসক সমাজে তোলপাড় শুরু হয়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে দুপুর থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে রাত তিনটে থেকে ভোর ৫টার মধ্যে। সেইমতো রাত ৩টের পর থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে থাকেন গোয়েন্দারা। তাতেই চিহ্নিত হয় অভিযুক্ত। চারতলায় ওঠার সময় তার গলায় ছিল ব্লু-টুথ হেডফোন। সেটা পড়েছিল মৃতদেহের পাশে। সেই সূত্র ধরে সঞ্জয়কে জালে তোলেন তদন্তকারীরা। লালবাজারে পুলিস কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েল  বলেন, ‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের মামলা হয়েছে। মৃতার পরিবারের সব দাবি আমরা মানতে রাজি। অন্য কোনও এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করাতে চাইলেও আপত্তি নেই।’ কিন্তু ধৃত কি সিভিক ভলান্টিয়ার? জবাব এড়িয়ে সিপি জানান, ‘যেই হোক, আমাদের চোখে অপরাধী।’ যদিও পুলিসের ‘এক অপরাধী’ তত্ত্ব মানতে নারাজ মৃতের বাবা ও জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। ময়নাতদন্তে উপস্থিত পিজিটি ডাক্তার এবং মেয়েটির বাবার বক্তব্য, একজনের পক্ষে এভাবে খুন করা অসম্ভব।    

    ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে ততক্ষণে উত্তাল বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল। নমো নমো করে ইমার্জেন্সি চালু ছিল বহু জায়গায়। বেলা বাড়তেই মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর, এন আর এস, ন্যাশনাল, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বাঁকুড়া সম্মিলনী সহ একাধিক বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়ে। হাওড়া, হুগলি সহ বিভিন্ন জেলার সরকারি হাসপাতালেও ছিল অচলাবস্থা। আর জি কর, মেডিক্যালের আউটডোরে তালা পড়ে যায় দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে। রাজপথে নামা ডাক্তারদের মিছিলে ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান! আর জি কর-এর ইমার্জেন্সি গেট বন্ধ করে দেয় পুলিস। চিনার পার্কের এস ডি সাগর, কেষ্টপুরের তমালিকা সেনগুপ্ত সহ শয়ে শয়ে রোগী আপ্রাণ চেষ্টা করেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি। বাবার কোলে ছোট্ট মীরের কপাল পুড়ছিল জ্বরে। ক্ষোভে দুঃখে বাবা বললেন, ‘হাসপাতাল কি চটকল? কেন কষ্ট দিচ্ছেন ডাক্তাররা?’

    বিকেলে এসএফআইয়ের বিক্ষোভ, মিছিল, পুলিসের সঙ্গে বচসায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, পুলিস লাঠিচার্জ করেছে। যদিও ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তার দাবি, বহিরাগতরা চড়াও হওয়ায় ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। চিকিৎসক, রাজনৈতিক দলের অবস্থানে দুপুর তিনটেয় বন্ধ হয়ে যায় শ্যামবাজার থেকে বেলগাছিয়াগামী রাস্তা। ২ ঘণ্টা অবরোধে ভুগতে হয় জনতাকে।    
  • Link to this news (বর্তমান)