• ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার ব্লু-টুথ হেডফোনেই রহস্যের কিনারা
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নীল রঙের ব্লু-টুথ নেকব্যান্ড হেডফোন। অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ বলতে পুলিসের হাতে ছিল এটুকুই। শেষ পর্যন্ত ওই হেডফোনের দৌলতে রহস্যের কিনারা করে ফেলল কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ। 

    গোয়েন্দারা মনে করেন, বিশেষ করে খুনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত তার অজান্তে ঘটনাস্থল বা ক্রাইম সিনে কোনও না কোনও ক্লু ফেলে যাবেই। আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। ইমার্জেন্সি বিভাগের প্রবেশপথে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ছবি। তাকে উপরে উঠে সেমিনার হলের দিকে যেতে দেখা যায়। সেই হলে নির্যাতিতার মাথার পাশ থেকে পাওয়া যায় একটি ব্লু-টুথ নেকব্যান্ড হেডফোন। অভিযুক্তকে পুলিস মধ্যরাতে আটক করে হাসপাতালের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিংয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তার স্মার্টফোন চেয়ে নেন গোয়েন্দারা। অন করা হয় তার ফোনের ব্লু-টুথ। তারপর ক্রাইম সিনে উদ্ধার হওয়া হেডফোনটির ‘পাওয়ার’ বাটন অন করে দিতেই অভিযুক্তের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, ‘ইওর ডিভাইস ইজ কানেক্টড’। সেখানেই কার্যত রহস্যের যবনিকা পতন হয়ে যায়। তখনও গোয়েন্দাদের সামনে কোনও নিরুত্তাপ হয়ে বসেছিল সঞ্জয়। 

    ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকেই গোয়েন্দারা ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর সময় রাত ৩টে থেকে ভোর ৫টার মধ্যে। এর ভিত্তিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেন তদন্তকারীরা। পুলিস সূত্রের দাবি, ওই ২ ঘণ্টায় মোট পাঁচজন ইমার্জেন্সি বিভাগের গেট দিয়ে প্রবেশ করে। ফুটেজ দেখে তাঁদের চিহ্নিত করার পর রাতেই তলব করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পাঁচজনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন গোয়েন্দারা। চারজন ওই সময় ওই বিল্ডিংয়ে প্রবেশের যথাযথ কারণ দেখান। কারও আত্মীয় ভর্তি আছেন, কেউ আবার গিয়েছেন জরুরি ওষুধ পৌঁছে দিতে। তাঁদের দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখা হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম ধৃত সঞ্জয়, যার কাছে ওই রাতে উপরে ওঠার কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল না। পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে তার কোনও ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। প্রথম খটকা লাগে পুলিসের।

    ইমার্জেন্সি বিভাগের মূল গেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ভোর ৪টে নাগাদ সেখান দিয়ে ঢুকছে সঞ্জয়। ঢোকার সময় তার গলায় নেকব্যান্ড ব্লুটুথ হেডফোনটি রয়েছে বলে  দেখা যায়। কিন্তু  ৪টে বেজে ৩৫ মিনিটে সে যখন বেরচ্ছে, তখন তার গলায় কোনও হেডফোন ছিল না। মিলে যায় হিসেব! আর গভীর রাতে হাসপাতালের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিংয়ে সঞ্জয়ের মোবাইলের সঙ্গে পড়ে থাকা হেডফোনের ব্লু-টুথ কানেকশন হয়ে যাওয়ায় স্পষ্ট হয়ে যায় যাবতীয় রহস্য। 
  • Link to this news (বর্তমান)