কাঠগড়ায় কর্তৃপক্ষ, অনশনে বসতে চলেছেন মৃত চিকিৎসকের পরিবার
এই সময় | ১১ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে অনশন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন মৃত চিকিৎসকের পরিবার। মৃতার বাবা এদিন বলেন, 'রবিবার মেয়ের কাজ। সোমবার থেকে আরজি করের সামনে অনশনে বসতে চাই। যতক্ষণ না আমার মেয়ে সুবিচার পাচ্ছে, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, আমরা অনশন চালিয়ে যাব।'মৃত চিকিৎসকের পরিবারের মূল নিশানাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। বাবার বক্তব্য, 'ছাত্র সমাজের সম্মিলিত চাপ না থাকলে ওঁরা আমার মেয়েকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো। সেই কারণে বার বার বলা হচ্ছিল, মেয়ে অপ্রীতিকর অবস্থায় ছিল, কখনও রটিয়ে দেওয়া হয়েছে সে আত্মহত্যা করেছে। এটা তো সরাসরি ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা।' একই সঙ্গে তিনি বলেন, 'ছাত্ররা যদি রাস্তায় থাকে আমরাও ওঁদের সঙ্গে থাকব। সকলের জন্য এই প্রতিবাদ জারি থাকবে।'
এ দিকে, আরজি কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে পড়ুয়া থেকে প্রাক্তনী, সকলেরই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। শনিবার প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী সংসদের এগজ়িকিউটিভ কমিটির মিটিং ছিল। সূত্রের খবর, সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষের নানা উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তনীরা।
তাঁদের একাংশের অভিযোগ, 'সিসিটিভি ক্যামেরা অনেক জায়গায় নেই। নিরাপত্তাও ঢিলেঢালা। সরকারি ও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের একটা বড় অংশকে ব্যবহার করা হয় কলেজের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য।' প্রাক্তনীদের প্রশ্ন, 'যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে কী করে ডিনকে রাখা হয়? এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ডিন বা কর্তৃপক্ষকেই তো প্রশ্নের মুখে ফেলা উচিত। কীভাবে তিনি নিজেদের ব্যাপারে তদন্ত করবেন?'
এ দিন কলেজের ভিতরে বিক্ষোভ জমায়েতে প্রবীণ চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, 'প্রিন্সিপালের পদত্যাগ দাবি করছি আমরা। তাঁর বিরুদ্ধে হাজারখানেক অভিযোগ রয়েছে। যে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে তা ভুয়ো। ডিএমই বা ডিএইচএসের নেতৃত্বে তদন্ত হওয়া উচিত ছিল।'
ওই কলেজের আরও এক প্রাক্তনী তথা প্রদেশ কংগ্রেসের মেডিক্যাল সেলের চেয়ারপার্সন তাপস ফ্রান্সিস বিশ্বাসের কথায়, 'যিনি নিজের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না, তাঁর ওই পদে থাকার কোনও অধিকার নেই। উনি তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পারেন। ওঁর লোকেদেরই কমিটিতে বসানো হয়েছে। দু'জন ইন্টার্নকে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে কীভাবে?'
প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার আন্দোলন-বিক্ষোভ হয়েছে। তাঁকে কিছুদিন আগে আরজি কর হাসপাতাল থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলিও করা হয়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, দিন কয়েকের মধ্যেই ফের আরজি কর হাসপাতালের প্রিন্সিপ্যালের চেয়ার ফিরে পেয়েছেন তিনি। প্রাক্তনী সংসদের সম্পাদক তথা তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, 'আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত চাই। পাশাপাশি গত কয়েক বছরে আরজি কর হাসপাতালে যা ঘটেছে, সে সবই আমরা রাজ্য সরকারকে লিখিত ভাবে জানাব।'
এ দিন সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টার ভাইরাল হয় (যার সত্যতা যাচাই করেনি 'এই সময়')। সেখানে দাবি করা হয়েছে, প্রিন্সিপাল নাকি এই মৃত্যুর খবর শোনার পরে বলেছেন, ওই মেয়েটি রাতে একা এ ভাবে ঘুরে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এই বয়ান-সহ বাকি অভিযোগ নিয়ে প্রিন্সিপালকে একাধিকবার ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে যাবতীয় প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি কোনও জবাব দেননি।
তবে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে তিনি বলেছেন, 'আমি এমন কোনও বক্তব্য বা মন্তব্য কোথাও করিনি। আমরাও চাই এই জঘন্যতম ঘটনার যথাযথ তদন্ত হোক। ওই চিকিৎসক অনডিউটি ছিলেন। তিনি ঘুরছিলেন এমন অহেতুক কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না।'
এ দিন ক্যাম্পাসে যথাযথ নিরাপত্তা এবং সুবিচার চেয়ে সরব হন কলেজের নানা অংশের ছাত্রছাত্রীরা। এক ছাত্রীর কথায়, 'এতদিন আমরা কলেজে পৌঁছে বাড়িতে খবর দিতাম, চিন্তা কোরও না। এবার কী বলব? বাড়ির লোকেরা তো বলছে, পড়তে হবে না চলে আয়। এই পরিস্থিতির দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।'
এ দিন সকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রিন্সিপাল। তবে সেই বৈঠক নিয়ে পড়ুয়াদের কোনও অভিযোগ নেই। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রিন্সিপাল যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেননি বিক্ষোভকারী চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রীরা। বৈঠকের পরেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। পরে কলেজে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
তিনি বলেন, 'পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা দাবি করেছেন, পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা, অন ডিউটি রুমে যথাযথ শৌচাগারের ব্যবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ রোখা, হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার। এই দাবিগুলি অবিলম্বে পূরণ করা হবে। পূর্ত দপ্তরকে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যত সিসিটিভি ক্যামেরা দরকার তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।'