নাম্বার প্লেটে লেখা — গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, ডব্লিউ বি ০৬-০০০২। পেট্রল-চালিত বুলেটপ্রুফ সাদা সেই অ্যাম্বাসাডর ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাহন। যদিও করোনা-পরবর্তী সময়ে অসুস্থতার কারণে ওই গাড়িতে আর চড়তেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি নেই, কিন্তু তাঁর গাড়িটা তো আছে। সেই অ্যাম্বাসাডর সংরক্ষণ করতে পারে রাজ্য সরকার।পরিবহণ দপ্তরের অধীনে আছে ওই গাড়ি। দক্ষিণ কলকাতার এলগিন রোডে সরকারি পুলে থাকে সেটি। বুদ্ধদেব না চড়লেও রুটিন মেনে প্রতি সকালে নির্দিষ্ট সময়ে এলগিন রোড থেকে পাম অ্যাভিনিউ পৌঁছে যেত তাঁর বাহন। রাতে ফিরত সরকারি পুলের গ্যারাজে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই গাড়িতেই ব্রিগেডে গিয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত বুদ্ধবাবু। নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে মঞ্চের পিছনে গাড়িতেই ছিলেন বসে। প্রবল ধুলোর কারণে নামতে পারেননি। প্রায় আধ ঘণ্টা বসে থেকে পাম অ্যাভিনিউ ফিরে গিয়েছিলেন সে দিন। ডব্লিউ বি ০৬-০০০২ চড়ে সেটাই ছিল তাঁর শেষ কোনও রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত হওয়া।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণের পর এখন কী হবে সেই গাড়ির? অ্যাম্বাসাডরটি-র বয়স নয় নয় করে দেড় দশক পেরিয়েছে। সেটি কি স্ক্র্যাপ করে দেওয়া হবে? রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যে গাড়ি ব্যবহার করেছেন, তা স্ক্র্যাপ করা হবে না। সংরক্ষণ করার ভাবনা রয়েছে। আপাতত এলগিন রোডের পুলেই গাড়িটি থাকবে।’
এই ব্যাপারে সিপিএমের কোনও আপত্তি নেই। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবের বক্তব্য, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে গাড়িতে চড়তেন, তা সরকারি গাড়ি। এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিবিজড়িত গাড়িটি যদি সংরক্ষণ করা হয়, তাতে আপত্তির তো কিছু নেই।’
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ়েড ক্যাটেগরির সুরক্ষার কারণে কলকাতা ছাড়াও দিল্লিতে বুদ্ধদেবের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ (বিপি) অ্যাম্বাসাডর থাকত বঙ্গভবনে। দিল্লিতে সরকারি বা দলীয় কর্মসূচিতে গেলে সেই গাড়িতে চড়তেন তিনি। এই ০০০২ নাম্বার প্লেটের গাড়িটিও দিল্লিতেই ছিল। ২০০০ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বছর কয়েক পর থেকে বুদ্ধদেব যে বিপি অ্যাম্বাসাডরে চড়তেন, তার নাম্বার ছিল ০০০১। ২০১১-র ১৩ মে ০০০১ গাড়িতে চড়েই রাজভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বুদ্ধদেব।
কিন্তু পরবর্তী তিন-চার-পাঁচ বছরে কলকাতায় থাকা বিপি অ্যাম্বাসাডরটিতে গোলমাল দেখা দেয়। ২০১৫ সালে একদিন পাম অ্যাভিনিউ থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যাওয়ার পথে মল্লিক বাজারের কাছে গাড়ির ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন বহুদিনের চালক মহম্মদ উসমান। অমন অবস্থায় ওই গাড়ি থেকে নেমে বুদ্ধদেব তাঁর কনভয়ের অন্য একটি সাধারণ অ্যাম্বাসাডরে চড়ে মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে যান।
এ দিকে, জ়েড ক্যাটেগরি সুরক্ষার কারণে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল স্পেশাল সিকিউরিটি ইউনিট। সেই ইউনিট থেকে গাড়িটির বেহাল অবস্থা নিয়ে একাধিক রিপোর্ট যায় রাজ্যের ডিরেক্টরেট অফ সিকিউরিটি-র কর্তাদের কাছে। এলগিন রোডে সরকারি পুলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বুলেটপ্রুফ এসইউভি থাকলেও বুদ্ধদেব অ্যাম্বাসাডর ছাড়তে চাননি। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে বঙ্গভবনে ০০০২ নাম্বার প্লেটের যে বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর রাখা ছিল, তা কলকাতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৪ সালের মে মাসে অ্যাম্বাসাডরের প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িটি সংরক্ষিত হলে ভবিষ্যতে ভিনটেজ কার হিসেবে থেকে যেতে পারে সেটি।