বাধা দেবে না, তাই সঙ্গম মৃতদেহের সঙ্গে? বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এই সময় | ১২ আগস্ট ২০২৪
১৯৯০-এর হেতাল পারেখ থেকে শুরু করে ২০০৬ সালের নিঠারি কাণ্ড। কিংবা ১৯৪৭ সালের পটভূমিকায় সাদাত হাসান মান্টোর লেখা ‘ঠান্ডা গোস্ত’-এর গল্প। অথবা ২০২৪-এর আরজি করের ধর্ষণ-খুন-ধর্ষণের ভয়াবহ ঘটনা। সব ক’টি নজিরকেই বিশেষজ্ঞরা এক সুতোয় গাঁথছেন একটি কারণে— নেক্রোফিলিয়া।অর্থাৎ, শুধু ধর্ষণ বা খুনই নয়, এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্ষক-খুনি নির্যাতিতার দেহের সঙ্গে যৌনক্রিয়া চালিয়ে গিয়েছিল ধর্ষিতার মৃত্যুর পরেও। চিকিৎসকরা বলছেন, নির্যাতিতার তরফে ন্যূনতম প্রত্যাখ্যান বা বাধা না-আসার ‘আনন্দে’ মশগুল থাকার মনোবিকারই এমন যৌনসঙ্গমের দিকে ঠেলে দেয় ধর্ষককে।
১৯৭৩-এর অরুণা শানবাগের ধর্ষণের ঘটনাকেও অনেকে নেক্রোফিলিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে দেন। মুম্বইয়ের কিংস এডওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজের ওই নার্সকে অবশ্য মৃত্যুর পর ধর্ষণ করা হয়নি। মর্মান্তিক ঘটনার পরেও ৪২ বছর বেঁচেছিলেন অরুণা। কিন্তু ধর্ষণের সময় থেকেই সম্পূর্ণ ‘ভেজিটেটিভ’ হয়ে যান তিনি। ধর্ষক অবশ্য অরুণা মারা গিয়েছেন ভেবে চালিয়ে গিয়েছিল ধর্ষণ।
তাই ওই ধর্ষকও বিরল মনোবিকার নেক্রোফিলিয়ার শিকার বলে মনে করেন অনেকে। ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রবীণ বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্ত মনে করেন, ‘নেক্রোফিলিয়ার শিকারদের অপরাধী বলা হবে না মনোরোগী, তা নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে।’ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম জানান, নেক্রোফিলিয়া নানা কারণে হতে পারে। নেপথ্যে থাকে জটিল মনোবিকার ও যৌনবিকার। নেক্রোফিলিকদের কাণ্ড ঘটানোর পিছনেও নানা কারণ দেখা যায়।
কিন্তু একটি বিষয় ‘কমন’ থাকে প্রায় সব ক্ষেত্রেই। তাঁর কথায়, ‘মৃতদেহ যেমন যৌন উত্তেজনায় সাড়া দেয় না কখনও, তেমনই তা যৌনমিলন প্রত্যাখ্যানও করে না। বাধাও দেয় না। চরম এই ঠান্ডা অবস্থাটিকেই উপভোগ করে নেক্রোফিলিকরা।’ তিনি মনে করেন, নেক্রোফিলিকদের মনের গভীরে থাকে ধর্ষিতার শরীরের উপর চরম নিয়ন্ত্রণ ও দমনের প্রবৃত্তিও। তাই যৌনসঙ্গমের জন্য মৃতদেহকে বেছে নেয় তারা।
মনোরোগের শিক্ষক-চিকিৎসক সৈকত বৈদ্য শোনাচ্ছেন নেক্রোফিলিয়ার ভয়াবহ ও ঘৃণ্য দিকটির কথাও। তিনি বলেন, ‘নেক্রোফিলিয়া হলো এক ধরনের প্যারাফিলিয়া বা যৌনবিকার। যেখানে মানুষটি মৃতদেহের প্রতি তীব্র যৌন আকর্ষণ বোধ করে ও মৃতদেহের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হয়। এরা যৌনমিলনের তাড়নায় অনেক সময়ে মৃতদেহের খোঁজে মর্গে চলে যায়, কবর খুঁজে বেড়ায় বা কাউকে খুন করে সেই মৃতদেহের সঙ্গেও যৌনসংসর্গ করে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরছেন অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজ়অর্ডার, প্রচণ্ড নেশা করা, বেশ কিছু মানসিক রোগ, সেক্স হরমোনের মাত্রার তারতম্য, তড়কা বা খিঁচুনি-সহ অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল এবং নিউরো-সাইকিয়াট্রিক সমস্যা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আপব্রিঙ্গিং বা শৈশব থেকে বড় হয়ে ওঠার মধ্যেও অনেকের ত্রুটি থাকে নানা রকম পারিবারিক ও আর্থসামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। শৈশবে একবার বা বারংবার যৌন অত্যাচার দেখে ফেলাও তার মধ্যে অন্যতম। তবে যতক্ষণে নেক্রোফিলিয়া ধরা পড়ে, ততক্ষণে দেখা যায় অপরাধ ঘটিয়েই ফেলেছে নেক্রোফিলিক ব্যক্তি।