এই সময়: ১৯৭৩-এর ২৭ নভেম্বর। ৫১ বছর আগের সেই দিনটা এখন অনেকেরই মনে নেই। তবে ৫১ বছর পরে আরজি কর হাসপাতালের মধ্যেই এক কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীর মর্মান্তিক পরিণতিতে হঠাৎ করেই তিনি যেন আবার ‘জীবন্ত’। যে জীবনে শুধু প্রাণটুকুই ছিল, ছিল না কোনও প্রাণশক্তি!আরজি করের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে, অরুণা রামচন্দ্র শানবাগের মর্মান্তিক পরিণতির কথা। যাঁকে আরজি করের এই চিকিৎসক ছাত্রীর মতোই হাসপাতালের মধ্যে ধর্ষণ করা হয়। তবে শানবাগ মারা যাননি। তিনি বেঁচে ছিলেন আরও ৪২টা বছর। তবে এই পুরো সময়টাই তাঁর কেটেছে কোমায়। মৃত্যুর অপেক্ষায় তাঁকে কাটাতে হয়েছিল আর ৪২টা বসন্ত। অবশেষে ২০১৫ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর চোখ খোলেনি, জ্ঞান ফেরেনি।
কর্নাটকের হলদিপুর থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ের কিংস এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং নিতে এসেছিলেন অরুণা। ট্রেনিং শেষ করে ওই হাসপাতালেই তিনি নার্স হিসেবে কাজে যোগ দেন। ওই দিন নিজের কাজ সেরে হাসপাতালে পোশাক বদলাচ্ছিলেন বছর ২৫-এর অরুণা। তখন সোনলাল নামে এক ওয়ার্ড বয় আচমকাই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
শুধু তাই নয়, গলায় কুকুরের চেন বেঁধে ধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচার চালানো হয় শানবাগের উপরে। পরের দিন সকালে যখন অরুণাকে উদ্ধার করা হয়, তিনি সংজ্ঞাহীন। হাসপাতালের মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। কুকুর বাঁধার চেন এত জোরে চেপে বসেছিল তাঁর গলা ও ঘাড়ে যে আট ঘণ্টা তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছয়নি। এতেই কোমায় চলে যান অরুণা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চার দশক কোমাতেই ছিলেন তিনি।
ওই হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেডে থাকতেন অরুণা। ওই হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা চার দশক ধরে তাঁর উপরে নজর রেখেছেন। তাঁকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো হতো, নিয়মিত পরিষ্কার করা হতো। ফলে চার দশক ধরে কোমায় থাকলেও বেড সোর হয়নি অরুণার। সেই ওয়ার্ড বয় সোহনলাল পরে অভিযুক্ত হয় চুরি ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল না, তাই সাত বছর জেল খেটে ছাড়া পেয়ে যায় সে।
আরজি করের নির্যাতিতার সঙ্গে আরও একটি জায়গায় মিল রয়েছে অরুণার। এই মেয়েটির মতো অরুণার বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তবে সব শেষ হয়ে যায় নির্মম অত্যাচারে। তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সমাজকর্মী ও সাংবাদিক পিঙ্কি বিরানি। তবে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা এর বিরোধিতা করেন আদালতে। ২০১১ সালে পিঙ্কির আবেদন খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালাত। শেষে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে অরুণা প্রয়াত হন।