• কার মদতে বাড়বাড়ন্ত সিভিক ভলান্টিয়ার হয়েও? উঠছে প্রশ্ন!
    এই সময় | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: কাগজেকলমে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (ডিএমজি) কর্মী। কিন্তু একদিনও সেখানে ডিউটি না-করে রাতারাতি পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য! আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের রমরমা দেখে চোখ কপালে উঠছে অনেকেরই। স্রেফ সিভিক ভলান্টিয়ার হয়েও পরনে 'KP' (KOLKATA POLICE) লেখা টি-শার্ট, বাইকে 'POLICE' লেখা স্টিকার আর সে সবের সঙ্গে পুলিশের দাপট নিয়ে চলাফেরা।কোন জাদুবলে এত কিছু? ডিএমজি থেকে পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটিতেই বা সঞ্জয় গেল কী করে? নেপথ্যে কারও প্রশ্রয় রয়েছে? অভিযোগ, কমিটির এক প্রভাবশালী অফিসারের মদতেই সঞ্জয়ের এই বাড়াবাড়ি। এ সব প্রশ্নের জবাবে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, 'ধৃতের যে সব কীর্তিকলাপ সামনে আসছে, আশা করি তার সঠিক তদন্ত হবে। হাসপাতালের ভিতরে বা বাইরের কারও মদত থাকলে তিনিও চিহ্নিত হবেন নিশ্চয়ই।'

    পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৯-এ ডিএমজি বিভাগে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাকে হামেশাই থাকতে শুরু করে সঞ্জয়, যে অনুমতি বা অধিকার তার ছিল না। করোনার পর থেকে সেটাই হয়ে ওঠে তার পাকাপাকি আস্তানা। শনিবার শিয়ালদহ আদালত থেকে তাকে ১৪ দিনের হেফাজতে পেয়ে এখন এ সব কারবারের শিকড় খুঁজতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানতে চান আরজি করের ক্রাইম সিনে সঞ্জয়ের সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না, তা-ও।

    তদন্তকারীরা জেনেছেন, সঞ্জয়ের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের কাছে হলেও বেশির ভাগ সময়ে সে আরজি কর হাসপাতালে ঘোরাফেরা করত। রাতেও অবাধ যাতায়াত ছিল হাসপাতালের বিভিন্ন ফ্লোরে। তাকে চিনত না, হাসপাতালে এমন কেউ নেই। শুধু পুলিশের টি-শার্ট পরে ঘোরাঘুরিই নয়, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বাহিনীর মহিলা কর্মীদের কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগও রয়েছে।

    শান্তনু সেনের কথায়, 'সিভিক ভলান্টিয়াররা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে তার (সঞ্জয় রায়) সম্পর্ক থাকতে পারে। এখন সেই যোগাযোগ কী লেভেলে ছিল, সেই যোগাযোগকে সে কী ভাবে ব্যবহার করেছে- এ সব তো যাঁরা এই কমিটিতে রয়েছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।' তাঁর সংযোজন, 'সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে আমরা জেনেছি, পুরো ঘটনা ৩৫ মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, এই ঘটনায় একজন জড়িত ছিল না একাধিক ব্যক্তি, তা ময়না-তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে বোঝা যাবে।'

    শুধু বাইরে নয়, নিজের পরিবারেও রীতিমতো সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছিল সঞ্জয়। একে তো মদ্যপ ভাইকে নিয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন দুই দিদি। তার উপরে একের পর এক বিয়ে করে আরও জটিলতা তৈরি করেছিল সঞ্জয়। রবিবারই সঞ্জয়ের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রীর মা অভিযোগ করেছেন, তাঁর মেয়েকে সঞ্জয় মারধর করত। সঞ্জয়ের এক দিদি আবার কলকাতা পুলিশেই কর্মরত।

    রবিবার তিনি বলেন, 'ও যা করেছে, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ওই মেয়েটির পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই। প্রশাসন যদি ভাইকে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দেয়, তাতেও আমার কোনও দুঃখ থাকবে না।' আর এক দিদির কথায়, 'আমি নিজেও তো একজন মেয়ে। আইনের চোখে ওর যে সাজা হওয়া উচিত, সেটাই হোক।'

    সঞ্জয়ের কঠোর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার রাজপথ থেকে সামাজিক মাধ্যম। ঘৃণা ঝরে পড়ছে সর্বত্র। কী বলছেন দিদিরা? কোনওমতে চোখের জল সামলে একজন বললেন, 'কী বলি। ছোট ভাই। এমন একটা কাজ করল...' কথা যেন শেষ হয়েও হলো না।
  • Link to this news (এই সময়)