• শিবের মাথায় জল ঢালতে নবদ্বীপের ঘাটগুলিতে ভক্তদের ব্যাপক ভিড়
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: শ্রাবণকে কেউ শিবের জন্মমাস, কেউ বা শিবের ব্রতের মাস হিসেবে পালন করেন। সোমবার শিবের বার হিসেবে পালন করেন শিব ভক্তরা। শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার অর্থাৎ আজ, শিবভক্ত পুণ্যার্থীরা বিভিন্ন মন্দিরে শিবঠাকুরের মাথায় জল ঢেলে পুজো দেবেন। তারই প্রস্তুতিতে রবিবার নবদ্বীপের গঙ্গা অর্থাৎ ভাগীরথী থেকে জল নিতে ভিড় করেছিলেন শিব ভক্তরা। এদিন নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী, বিদ্যানগর, শ্রীরামপুর, দাঁইহাট, মাধাইপুর সহ আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন। নবদ্বীপের বড়ালঘাট, রানিরঘাট, পোড়াঘাট, শ্রীবাসঅঙ্গন ঘাট সহ অন্যান্য ঘাটে জল নেন। তারপর হেঁটে মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। 

    শিব অনুরাগীরা ফুল মালা, ত্রিশূল, ডমরু, বড় বড় বাঁক সাজিয়ে তাতে কেউ পিতলের কলসি, কেউ মাটির বা প্লাস্টিকের জারে গঙ্গার জল নিয়ে শিবমন্দিরের উদ্দেশে রওনা দিলেন। অনেকেই দল বেঁধে এসেছিলেন। জয় বাবা ভোলেনাথ লেখা লাল, কেউ গেরুয়া গেঞ্জি, কেউ কালো রঙের উপর মহাকাল লেখা গেঞ্জি পরে সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। ছোট ছোট বাচ্চা থেকে বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা লাল পাড় শাড়ি পরে এসেছিলেন। বাঁক কাঁধে হেঁটে প্রায় ৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কেউ নদীয়ার শিবনিবাসে, কেউ বা প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বুড়োরাজের মন্দির, কেউ বা ট্রেন পথে জল নিয়ে হুগলির তারকেশ্বর শিবমন্দিরে পুজো দিতে রওনা দেন। 

    নদীয়ার ভীমপুর থেকে স্নান করতে এসেছিলেন নিত্যানন্দ দাস ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দাস, প্রতিবেশী প্রীতি সরকার, আঁখি বিশ্বাসরা। আঁখি বলেন, সবাই নবদ্বীপের গঙ্গায় স্নান সেরে বাবার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে হাঁটা শুরু করব। প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে যাব। ভোরবেলা বাবার মাথায় জল ঢালব। 

    নদীয়ার হাঁসখালি থানার ভৈরবচন্দ্রপুর থেকে এসেছেন একাদশ শ্রেণির ছাত্র দীপ বিশ্বাস। সে জানায়, সকালে অটো করে এখানে এসেছি। এখান থেকে স্নান সেরে কলসিতে জল নিয়ে হাঁটব। এই যাতায়াতের পথে অনেক জায়গায় বাঁক রাখার ব্যবস্থা থাকে। সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে সোমবার ভোরে ঠিক মন্দিরে পৌঁছে যাব। 

    নবদ্বীপ মণিপুরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ধর বলেন, বড়ালঘাটে সবাই মিলে গঙ্গাস্নান করলাম। এই প্রথম কাকিমা মৌমিতা ধরের সঙ্গে হেঁটে শিবনিবাস যাচ্ছি। 

    বড়ালঘাটে বাঁক, শিকে, কলসি, ব্যাগ বিক্রি করছিলেন ফাঁসিতলার যুবক প্রশান্ত চাকি। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই দিনে দোকান পেতে বসি। এখানে ১০০-র বেশি দোকান বসেছে। সবারই বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। স্নানের ঘাটে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রবিবার সকালে প্রতিটি ঘাটে ছিল কড়া পুলিসি নিরাপত্তা। ভিড় সামাল দিতে স্নানের ঘাটগুলিতে ড্রপ গেট তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া ঘাটগুলিতে ছিল পুলিস সহায়তা কেন্দ্র। নদীপথে স্পিড বোট নিয়ে নজরদারি করতে দেখা যায় ক্যুইক রেসপন্স টিমের সদস্যদের। এদিন ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত পুলিসকর্মী নিযোগ করা হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। নবদ্বীপ ফেরিঘাট 

    থেকে যাতায়াতের জন্য একটি অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টারও খোলা হয়। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)