• পাঠভবনের শিশুদের দূরন্তপনা হেরিটেজ স্বীকৃতি রক্ষায় দিশেহারা কর্তৃপক্ষ
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: আর পাঁচটা স্কুল যেমন হয়, বিশ্বভারতীর পাঠভবন ঠিক তেমনই। ‌একসঙ্গে ক্লাস করার পর ফুটবল কিংবা ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়া। হইহুল্লোড়, দাপাদাপি। টিফিনে বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া। সবমিলিয়ে দূরন্ত শৈশব। আর কচিকাঁচাদের এই দূরন্তপনাকে ঘিরেই বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। কেননা, দিন কয়েক আগে খেলতে গিয়ে একের পর এক কাচ ভেঙেছে সিংহ সদনের। গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে ইউনেস্কোর লিভিং হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে শান্তিনিকেতন। ফলে, হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত ভবন, স্থাপত্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জবাবদিহি ইউনেস্কোকে করতে হয়। সেটা ভেবেই এখন কার্যত দিশেহারা অবস্থা কর্তৃপক্ষের। 

    ইতিহাস বলছে, ১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্য আশ্রম নামে পাঠভবনের পথ চলা শুরু। মাত্র পাঁচজনকে নিয়ে শুরু হয় পঠনপাঠন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গুরুদেবের জৈষ্ঠ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম দিকের মাস্টারমশাইরা ছিলেন সতীশচন্দ্র রায়, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, জগদানন্দ রায় প্রমূখ। শুধু লেখাপড়ায় নয়, খেলাধুলাও ছিল শিক্ষার অঙ্গ। প্রকৃতির কোলে শৈশব যাতে নিবিড় ভাবে বেড়ে ওঠে এমনই লক্ষ্য ছিল গুরুদেবের। তাই পড়াশোনা খেলাধুলার পাশাপাশি নাচ, গান শিল্প ভাবনা প্রভৃতিকেও অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হতো। এরপর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা হলে আশ্রম বিদ্যালয় পাঠভবন নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। তবে, এই ঐতিহ্য শুধু ঘরবাড়ি  নিয়ে নয়। তার সঙ্গে সংস্কৃতি ও পরম্পরার মেলবন্ধনও জড়িয়ে রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল পড়তে পড়তে খেলা, খেলতে খেলতে পড়া। সে কারণেই জায়গাটি রাখা ছিল উন্মুক্ত। বর্তমানে পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। শান্তিনিকেতনে সেই খোলামেলা পরিবেশ আর নেই। পরিবর্তে নিরাপত্তার নামে একের পর এক পাঁচিল তোলা হচ্ছে। তবে, পাঠভবনের মৌলিক শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখতে বদ্ধপরিকর কর্তৃপক্ষ। তাই এখনও পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা পড়ুয়াদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। খেলতে গিয়ে এর আগেও সিংহ সদনের কাচ বহুবার ভেঙেছে। কিন্তু তখন আর এখনকার মধ্যে পরিস্থিতি আলাদা। বর্তমানে শান্তিনিকেতন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই জবাবদিহির পাশাপাশি হেরিটেজ স্বীকৃতি খোওয়া যাওয়ার ভয় রয়েছে। কিন্তু সেসব বোঝে না শিশুমন। খেলতে গিয়ে দিন কয়েক আগে ফের ভেঙেছে সিংহ সদনের বেশ কিছু কাচ। বিষয়টি জানাজানি হতেই বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে পাঠভবন কর্তৃপক্ষ। যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, খেলতে গিয়ে নয়, ঝামেলার জেরে বেশ কিছু পড়ুয়া ঢিল মেরে সেই কাজ করেছে বলে অভিযোগ। যার জেরে অভিভাবকদের ডেকে সতর্কও করা হয়েছে। যদিও  বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের দাবি, সীমানার পাঁচিল তুলে শান্তিনিকেতনকে সংকীর্ণ করা হয়েছে। আর এই সংকীর্ণতা থেকেই এই বিকৃতি আসছে। কারণ যাই হোক, এর জেরে শৈশব ও হেরিটেজ—এই দু’কুল রক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে পাঠভবন। যদিও পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধিরূপা সিনহা বলেন, ‘শিশুরা তো ভুল করবেই। ওদের সঠিক দিশা দেখানো শিক্ষকদের কাজ। আমরা ওদের বুঝিয়েছি বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনটা করণীয় আর কোনটা করণীয় নয়। আশাকরি, ওরা বুঝতে পারবে।’- নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)