• এআই প্রযুক্তির জালে তিন সাইবার প্রতারক
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: সাইবার প্রতারকদের জন্য দুঃসংবাদ। এবার রক্তমাংসের পুলিসের সঙ্গে সাইবার অপরাধীদের ধরছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই! অবিশ্বাস্য হলেও সম্প্রতি কুপার্স ক্যাম্প থেকে তিন প্রতারককে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই গ্রেপ্তার করেছে রানাঘাট জেলা পুলিসের সাইবার ক্রাইম থানা। 

    কেবল জামতাড়া নয়, সাম্প্রতিক ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও গজিয়ে উঠছে সাইবার অপরাধীদের একাধিক ‘এপি সেন্টার’। সেই তালিকার প্রথমের দিকেই রয়েছে রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্প এলাকা। একাধিক প্রতারণা চক্রের যোগ এবং গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটেছে। ১০ আগস্ট ফের কুপার্স থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক, কল্যাণী এইমসের মতো জায়গায় চাকরি দেওয়ার নাম করে একাধিক ব্যক্তির থেকে তারা মোটা টাকা হাতিয়েছিল বলে অভিযোগ। ধৃতদের নাম সুমন কুণ্ডু, সাগর কুণ্ডু ও জিত দেবশর্মা। 

    কীভাবে সংঘটিত হতো অপরাধ? পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত বেকার যুবক-যুবতীদের ‘টার্গেট’ করত প্রতারকরা। মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোনে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হতো আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন। তা দেখে অনেকেই পা দিয়ে ফেলতেন প্রতারকদের পাতা ফাঁদে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে একজন যোগাযোগ করত এজেন্ট হিসেবে। সে চাকরি কোথায় রয়েছে, কত টাকা মাইনে এবং কী পদে রয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বায়োডাটা চাইত। কেউ সেই বায়োডাটা দিলে ধরে নেওয়া হতো প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছে ‘শিকার’। এরপর প্রথমজন একটি ভুয়ো ফর্ম ফিলআপ করাত। ‘প্রসেসিং ফি’ নেওয়ার নামে প্রথম ধাপে ৩৫০ টাকা নেওয়া হতো। অনলাইন পদ্ধতিতে সেই টাকা নেওয়ার পর টার্গেটের কাছে ফোন আসত দ্বিতীয় জনের। সে বেসরকারি ব্যাঙ্ক অথবা সংস্থার নিয়োগ আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নামে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা দিতে বলত। বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে সেই টাকা আদায় হয়ে গেলেই কাজ শুরু হতো পরবর্তী ধাপের। টার্গেটকে জানানো হতো, এবার অনলাইনে তার একটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। নামমাত্র সেই পরীক্ষা নেওয়ার পর ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ জমা করার দাবি জানাত তৃতীয়জন। অনেকেই আর টাকা দিতে অস্বীকার করতেন। এরপর শুরু হতো ব্রেনওয়াশ। আর কিছু টাকা দিলেই যে চাকরি একেবারে হাতে হাতে মিলবে, তা বিশ্বাস করানোর পর আদায় করে নেওয়া হতো ২২ হাজার টাকা। পরে আবার ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হতো। যেহেতু ততক্ষণে টার্গেট অনেক টাকাই দিয়ে ফেলেছেন, তাই শেষবার ২৫ হাজার টাকা দিয়ে চাকরি নিশ্চিত করতে চাইতেন। ব্যাস, এই টাকা দিলেই নির্দিষ্ট ফোন নম্বরগুলি ব্লক করে দেওয়া হতো। এভাবে মাথাপিছু প্রায় ৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করা হতো। 

    সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর ব্যবহার শুরু করেছে রানাঘাট পুলিসের সাইবার ক্রাইম থানা। দেশের কোন কোন জায়গায় সাইবার অপরাধ হচ্ছে, তা অনেকটাই বলে দিতে পারে এই বিশেষ প্রযুক্তি। এক্ষেত্রে এআই-ই বলে দেয় সাইবার অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে কুপার্স এলাকায়। সেই সূত্র ধরেই প্রথমে কুপার্স এবং পরবর্তীতে তিনজনের হদিশ মেলে। সাইবার প্রতারকদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালায় সাইবার ক্রাইম থানা। শেষ পর্যন্ত পুলিসের পাতা জালে ধরা পড়ে তিনজন।

    পুলিসের এক কর্তা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে আমরা বুঝে গিয়েছিলাম একটি অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান শুরু করি। ওই তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই চক্রের জাল কতদূর বিস্তৃত তা নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)