• ডিগ্রি কোর্সে অনীহা বর্তমান প্রজন্মের, কলেজে ভর্তি হতে ফোন কর্তৃপক্ষেরই
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: কোথাও অর্ধেক খালি, কোথাও আবার হাতে গোনা তিন-চারজন। স্নাতকে ভর্তির চেহারা আরামবাগ মহকুমার কলেজগুলিতে অনেকটা এরকমই। স্নাতকে প্রথম পর্যায়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বিভিন্ন কলেজেই বহু আসন খালি পড়ে রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলিতে হাল সবচেয়ে খারাপ। তাই ভর্তি হওয়ার ‘আর্জি’ জানিয়ে পড়ুয়াদের ফোন করছেন কলেজের কর্তারা। তাতে কিছু ক্ষেত্রে সাড়া মিললেও সামগ্রিকভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষামহল। 

    আরামবাগ মহকুমার প্রত্যেকটি কলেজেই জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু হয়েছে। সেই নীতিতেই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে স্নাতকস্তরে। প্রথম পর্যায় শেষে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ মপ আপ রাউন্ডের ভর্তির প্রক্রিয়া গত ৮ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ে সব বিভাগ মিলিয়ে ৩৫০১টি আসন রয়েছে। সেখানে প্রথম দফায় ১৭২৪ জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। গণিত বিষয়ে ১৩৪টি আসন রয়েছে। কিন্তু, ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন। ফিজিক্সে ৪৯টি আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। কম্পিউটার এপ্লিকেশন সাবজেক্টেও প্রথম পর্যায় শেষে ৮৭টি আসনের মধ্যে পূরণ হয়েছে ৪৩টি। নেতাজি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশ্বনাথ গড়াই বলেন, যেসব পড়ুয়া ফর্ম ফিলআপ করে ভেরিফিকেশন করেননি তাঁদের ফোন করা হচ্ছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনেক পড়ুয়াই ভর্তি হবেন। 

    প্রায় একই অবস্থা আরামবাগ গার্লস কলেজেও। সেখানেও মোট আসন প্রায় দু’হাজার। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০০ পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ওই কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ সাজিদুল ইসলাম বলেন, এখানে বিজ্ঞান বিভাগ পড়ানোর ব্যবস্থা নেই। তবে অন্যান্য বছর ১২০০ থেকে ১৪০০ পড়ুয়া ভর্তি হন। এবার ভর্তির পরিমাণ কম। ফোন করা হচ্ছে ছাত্রীদের। 

    গোঘাটের বেঙ্গাই অঘোরকামিনী প্রকাশ চন্দ্র মহাবিদ্যালয়েও পড়ুয়া ভর্তি অনেকটা একই রকম। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখানে প্রথম পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৫ জন। কিন্তু, এখনও সেখানে প্রায় ২১০০ আসন খালি পড়ে আছে। অধ্যক্ষ পরমার্থ ঘোষ বলেন, এবার পড়ুয়া ভর্তির হার তুলনামূলক কম। বিজ্ঞান বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে তিন-চারজনের অ্যাপ্লিকেশন এসেছে। ভেরিফিকেশনের জন্য ফোন করা হচ্ছে। তাতে অনেক সময় সাড়াও মিলছে।

    ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনেকে আবার নানা সমস্যাতেও পড়ছেন। সাইবার কাফেতে আবেদন করতে গিয়ে অনেকের নানা ভুলও হচ্ছে। আরামবাগের এক ছাত্রী বলেন, স্নাতকে ভূগোল পড়ার জন্য একাধিক কলেজ চয়েস দিয়েছিলাম। চন্দননগর কলেজে সুযোগ আসায় ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু, যাতায়াত সহ অন্যান্য অসুবিধার জন্য সেখানে ছেড়ে দিয়ে আরামবাগের দু’টি কলেজে নতুন করে আবেদন করতে হয়েছে। ভর্তি হতে পারব কি না উৎকণ্ঠায় রয়েছি। ভর্তির এই নিয়মে শিথিলতা আনলে ভালো হয়। আমার মতো অনেককে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। 

    কলেজগুলিতে ভর্তির হার কম কেন? শিক্ষক মহলের অনেকের মত, পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল সহ অন্যান্য শাখায় পড়তে আগ্রহী। তাছাড়া স্নাতকে চার বছর পড়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। নানা জটিলতায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যত বন্ধ। তাই পড়ুয়াদের অনেকে স্নাতকে ভর্তির ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করছে।
  • Link to this news (বর্তমান)