সংবাদদাতা, লালবাগ: সন্ধ্যা নামতেই মুর্শিদাবাদ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া নানা গোপন ডেরায় জুয়ার আসর বসছে। মাঝরাত পর্যন্ত রমরমিয়ে আসর চলছে। এর জেরে সীমান্ত এলাকার যুবসমাজ থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া গরিব মানুষ জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। জুয়ার টাকা জোগাড়ে হাত পড়ছে ঘরের জিনিসপত্র, এমনকী মহিলাদের গয়নায়। যার জেরে দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক অশান্তি এখানকার অনেক বাড়িতে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে।
গত মঙ্গলবার ও বুধবার রানিতলা থানার খড়িবোনা ঘাট ও পাট সাহেবনগর এলাকায় জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে পুলিস মোট ১৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বেশ কয়েকহাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, ধারাবাহিক অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগের সমস্যার কারণে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। লালবাগ মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকার প্রত্যন্ত আমবাগান, নদীর পাড়, জঙ্গল বা ঝোপঝাড় ঘেরা চর, পরিত্যক্ত বাড়ি এখন জুয়ার গোপন ঠেক হয়ে উঠছে। পুলিসের চোখকে ফাঁকি দিতেই এসব এলাকায় জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। প্রায় সারা বছর সেখানে জুয়ার আসর বসলেও কনকনে শীত ও বর্ষার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দিনে জুয়ার রমরমা বাড়ে।
জুয়ার আসরে যাতে পুলিস এসে না পৌঁছয়, সেজন্য স্থানীয় কাউকে নজরদারিতে রাখা হয়। বদলে তাকে মোটা টাকা দেওয়া হয়। এত সাবধানতা সত্ত্বেও অবশ্য সবসময় পুলিসের নজর এড়ানো সম্ভব হয় না। স্থানীয় সোর্সকে কাজে লাগিয়ে পুলিস জুয়ার আসরে হানা দেয়। কিন্তু পুলিসের অভিযানে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে আবার সুযোগ বুঝে আসর বসে।
এর জেরে সীমান্তের মানুষের জীবনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য দিনের শেষে কাজ থেকে ফিরে সটান জুয়ার আসরে হাজির হচ্ছে। সারাদিনের রোজগার কয়েক মুহূর্তে জুয়ার বোর্ডে হেরে বাড়ি ফিরছে। ফলে স্ত্রী ও সন্তানকে প্রায়ই অভুক্ত অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় বাহুবলীরা জুয়ার ঠেক চালায়। এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করলেই চোখরাঙানি, শাসানি, এমনকী প্রাণনাশের হুমকিও মেলে। তাই চোখের সামনে সন্তান, স্বামী কিংবা বাবাকে জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হতে দেখলেও কারও কিছু করার থাকছে না। এলাকার মানুষের দাবি, জুয়াড়িদের ধরে কিছু হবে না। এসবের পিছনে যে বড় মাথারা রয়েছে, তাদের ধরতে হবে।
আখরিগঞ্জের বৃদ্ধ মিনারুল শেখ বলেন, অল্প সময়ে বিনা পরিশ্রমে মোটা টাকা রোজগারের আশায় কলেজপডুয়ারাও জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। একটা সমাজের জন্য এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়।