• ভাঙল বাঁধ, গঙ্গার জলে ভাসল গ্রাম
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ ও সংবাদদাতা, মানিকচক: চরম বিপদসীমা অতিক্রম করতে চলেছে গঙ্গা। ইতিমধ্যে মানিকচক ব্লকের তিন জায়গায় বাঁধ ভেঙে হুহু করে ঢুকে পড়েছে জল। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর, হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায়। শতাধিক বিপন্ন মানুষকে প্রশাসন নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। এছাড়াও জেলা এবং ব্লকস্তরে ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

    বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া স্বয়ং মানিকচকে রয়েছেন। প্রচুর স্পিডবোট নামানো হয়েছে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে নৌকাও। 

    জেলাশাসক বলেন, মানিকচকে সারারাত থাকছি। আমাদের দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসক ও ছ’জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার আধিকারিকও রয়েছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা দলকেও তৈরি রাখা হয়েছে। 

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিচক ঘাটে গঙ্গার বিপদসীমা ২৪.৬৯ এবং চরম বিপদসীমা ২৫.৩। রবিবার বেলা বারোটার সময় গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৪.৮২। গঙ্গা বিপদসীমা অনেক আগেই পার করেছে। খুব শীঘ্রই চরম বিপদসীমাও পেরিয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রশাসনের। এখানে বৃষ্টি না হলেও গঙ্গার ‘আপার ক্যাচমেন্ট’ অর্থাৎ উত্তরাখণ্ড এবং ফুলহর নদী দিয়ে উত্তরবঙ্গের ওপরের দিকের জেলাগুলির বৃষ্টির জলেই গঙ্গা ফুঁসছে বলে জানান প্রশাসনের কর্তারা। 

    রবিবার ভোর তিনটে নাগাদ বাঁধ ভেঙে গঙ্গার জল ঢুকে প্লাবিত হয় মানিকচক ব্লকের উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশরপুর, কালুটনটোলা, গোবর্ধনটোলা, চামা, মানিকনগর গ্রাম। রাতেই বাড়িঘর ছেড়ে পশ্চিম রতনপুর বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নেয় প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার। 

    এছাড়াও মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর ও হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় যেকোন মুহুর্তে গঙ্গার জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

    জেলা শাসক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের ত্রিপল এবং পর্যাপ্ত  শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। বেবি ফুডের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ভুতনিতে তিনটি ফ্লাড শেল্টার সহ এলাকার স্কুলগুলিতেও থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সাপের উপদ্রব বাড়ে বলে মানিকচক ও ভূতনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনম রাখা হয়েছে। 

    স্থানীয়দের দাবি, ১৯৯৮ সালের মতোই বন্যা পরিস্থিতির মুখে ভূতনি। প্রভাত কুমার মণ্ডলের অভিযোগ, ইচ্ছে করলেই প্রশাসন এই পরিস্থিতি আটকাতে পারত। হাতে অনেক সময় ছিল। কিন্তু ভূতনিকে অবহেলা করা হয়েছে। মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র অবশ্য বলেন, ভাঙন রোধে প্রশাসন কাজ করেছে।

    মানিকচক ব্লকের উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশরপুর কালুটোনটোলা এলাকার দু’টি জায়গায় ৩০ মিটার করে ও একটি জায়গায় ৫০ মিটার অংশে  দীর্ঘ এক বছর বাঁধ ছিল না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, বারবার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও বাঁধের ভাঙা অংশ সংস্কার করা হয়নি। কাজেই গঙ্গায় জল বাড়লেই বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা ছিলই।
  • Link to this news (বর্তমান)