• আর জি কর খুনকাণ্ড: ঘরের মেয়ের শোকে পাথর মধ্যমগ্রামের মাতৃসদন
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মধ্যমগ্রাম: তিনি ডাক্তার হওয়ার পর আরও অনেকের মতো বলতেন, ‘মানবসেবা আমার মূল ধর্ম হবে।’ তবে কথাটা যে স্রেফ কথার কথা ছিল না, তার প্রমাণ পেয়েছিলেন রোগীরা। দেখেছিলেন সহকর্মী চিকিৎকরা। করোনার সময় সবাই যখন ভয়ে সিঁটিয়ে, তখন সদ্য ডাক্তারি পাশ করা তরুণীটি দিনরাত এক করে মানুষের সেবা করে গিয়েছেন। সে কথা এখনও স্বীকার করেন অসংখ্য রোগী থেকে পুরসভার চেয়ারম্যান পর্যন্ত। তাঁর সহকর্মীরা তখনও প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। এখনও প্রশংসা করছেন। তবে সে প্রশংসার সঙ্গে মিশেছে শোক। পাহাড়প্রমাণ দুঃখ। 

    মধ্যমগ্রাম মাতৃসদন বা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস স্পেশালাইজড অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে ২০১৯ সালে কার্যত হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। তারপর ডাক্তারি প্র্যাকটিসে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন নিজেকে। সে যাত্রাপথ মর্মান্তিকভাবে শেষ হল অমানুষিক অত্যাচারে। আরজি কর হাসপাতালের মধ্যেই ধর্ষণ এবং তারপর খুন হতে হল তরুণী চিকিৎসকটিকে। এ দুঃখেই কার্যত পাথর মাতৃসদনে কর্মরত তাঁর সহকর্মীরা। 

    তাঁর ছিল সদা হাস্যময় একটি মুখ। ছিলেন মিতভাষী। একজন চিকিৎসকের হল এই দু’টি অন্যতম গুণ। তার অধিকারী ছিলেন তিনি। সেকথাই বারবার বলছেন মাতৃসদনের সহকর্মীরা। ২০২২ পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা করেছেন ওই তরুণী। করোনার সময় সবাই যখন নিজেদের বাঁচিয়ে চলছিলেন তখন ভয় ভুলে লড়ে গিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে রোজ আসতেন অ্যাম্বুলেন্সে করে। ১০ শয্যার আইসিইউ ও পাঁচ শয্যার এইচডিইউ’তে আরএমও’র দায়িত্ব পালন করতেন। ওয়ার্ড মাস্টার সুশান্ত পাল বললেন, ‘ওঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও কথা হবে না। কোনও চিকিৎসক আসতে দেরি করলে উনি ওয়ার্ড ছেড়ে নড়তেন না। ব্যবহারের তুলনা হয় না।’ সুশান্তবাবুই জানালেন, সদ্য ডাক্তার হওয়া তরুণীটির পারিবারের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। পরিবারের কেউ সেলাইয়ের কাজ করতেন। তিনি অনুরোধ করেছিলেন, হাসপাতালের পোশাক যদি তাঁর কোনও আত্মীয়কে দিয়ে তৈরি করানো যায়। তাহলে সুরাহা হয়। সুশান্তবাবু বলেন, ‘আমরা তা করেওছিলাম।’ নিশিথা পাল ও আশিস বিশ্বাস নামে অন্য দুই সহকর্মী বলেন, ‘ওঁর মতো কাউকে এরকম বিকৃত লালসার শিকার হতে হবে, তা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। কাজের পর হাসপাতালে বসে পড়াশোনা করতেন। হাতের লেখার তুলনা ছিল না।’ আর মাতৃসদনের সেই অ্যাম্বুলেন্সটির চালক সমীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোভিডের সময় অনেকে হাসপাতালে আসতে ভয় পেতেন। তখন সাহস করে রোজ আসতেন ম্যাডাম। আমি প্রতিদিন বাড়ি থেকে নিয়ে আসতাম। রাতে ছেড়ে আসতাম। দিদি বারবার বলতেন, মানবসেবা আমার মূল ধর্ম হবে।’ মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ বলেন, ‘আমি প্রয়োজনে অনেকবার কথাও বলেছি। সে কথা আজ বড্ড মনে পড়ছে। আমরা মর্মাহত।’
  • Link to this news (বর্তমান)