• রামরাজাতলায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিসর্জন, জনস্রোত
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: হাওড়ার রামরাজাতলার প্রায় তিনশো বছর প্রাচীন রাম নবমীর পুজোতে কয়েক লক্ষ ভক্ত সমাগম হয়। শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার রামের বিসর্জন যাত্রা ঘিরে প্রায় জনস্রোত। শোভাযাত্রায় থাকে সৌম্যচণ্ডী সহ বড় ও ছোট নবনারী সহ আরও বহু দেব-দেবী। রামরাজাতলা থেকে এনএস রোড ধরে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত শোভাযাত্রায় মানুষের ভিড় সামলাতে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিস বাহিনী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় হাওড়া সিটি পুলিস ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছিল। 

    এদিন সকাল থেকে রামরাজাতলা থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত সাজো সাজো রব। দুপুর হতেই রামচরণ সেন রোড, শাস্ত্রী নরেন্দ্র গাঙ্গুলি রোড, মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড, এন এস রোডে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী, ইছাপুরের সৌম্যচণ্ডীকে দুপুর ১২টা নাগাদ সাঁতরাগাছি মোড়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর বিকেলে বাঁকসারা থেকে একে একে আনা হয় ছোট নবনারী ও বড় নবনারীকে। তারপর তারা গঙ্গা অভিমুখে অগ্রসর হয়। সব শেষে বের হয় রামরাজার শোভাযাত্রা। বাদ্যযন্ত্র, সং সহ রাম, হনুমান, বামনাবতারের ছোট ছোট পুজো কমিটিগুলোও অংশ নেয় শোভাযাত্রায়। হাওড়ার পুলিস কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘প্রায় ৭০০ অতিরিক্ত পুলিসকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। দায়িত্বে ছিলেন হাওড়া সিটি পুলিসের পদাধিকারীরা। যানজট নিয়ন্ত্রণে সিভিক ভলান্টিয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল।’

    প্রসঙ্গত ১৭৫০ সালে উত্তর প্রদেশের কনৌজি ব্রাহ্মণ পরিবারের হাত ধরে নোনাপুকুরে শুরু হয়েছিল রামরাজার পুজো। আজ তা পরিণত বড় উৎসবে। জানা গিয়েছে, রাজা মদন ঘোষের বংশধর রাজা অযোধ্যা রাম চৌধুরীর স্বপ্নাদেশে পাওয়া এই পুজো সুবিশাল রূপ নেয়। কয়েক বছর পর শখেরবাজার অধুনা রামরাজাতলার মন্দিরে রাম পূজিত হতে শুরু করেন। রামনবমীতে ২৬ ফুট উচ্চতার যে রাম এখানে পুজো পায় তার রূপ চেনা রামের থেকে অনেকটা আলাদা। এই রামের গোঁফ আছে। গাত্রবর্ণ সবুজ। রাজবেশে রাম একা নন, তার সঙ্গে একই কাঠামোতে পূজিতা সীতাও। সঙ্গে মহাদেব, সরস্বতী, ব্রহ্মাসহ আরও ২৫ দেবদেবী। প্রথমে রামনবমী থেকে তিন দিন পুজো হতো। বর্তমানে চার মাস পুজো চলার পর শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার হয় বিসর্জন। রাজা অযোধ্যা রাম চৌধুরীর ২৭তম বংশধর ভোলানাথ চৌধুরী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে শোভাযাত্রার সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা নিয়ে সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সে সময় এই সংক্রান্ত একটি মামলা প্রিভি কাউন্সিলে ওঠে। তারপর সিদ্ধান্ত হয়, রামের উচ্চতা অনুযায়ী, শোভাযাত্রার রাস্তায় থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলির উচ্চতা বাড়ানো হবে।’ এখনও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রামরাজাতলা থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত বিদ্যুতের খুঁটিগুলোর উচ্চতা অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)