• দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব এবার বেসরকারি হাতে
    এই সময় | ১২ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়, দুর্গাপুর: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রশ্নে সরকারি হাসপাতালের বেহাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চিকিৎসাধীন রোগীকে দেখতে যখন-তখন ওয়ার্ডে ঢুকে যান পরিবার-পরিজনেরা। ব্যস্ত হাসপাতাল চত্বরে কে কখন আসছে-যাচ্ছে তার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণও থাকে না। এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করতে বেসরকারি মদতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল।এ বার থেকে ভিজ়িটিং পাস দেখিয়ে দিনে দু’বার রোগীর সঙ্গে দেখা করা যাবে। এর পাশাপাশি হাসপাতাল একেবারে নিট অ্যান্ড ক্লিন রাখতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এ বার থেকে অনেকটা কর্পোরেট ধাঁচে পরিচালিত হবে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল। এই কাজে পরিকাঠামোগত সহযোগিতা করবে সনকা, দ্য মিশন ও হেল্‌থ ওয়ার্ল্ড— এই তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল।

    কোনও সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে একসঙ্গে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের এগিয়ে আসার নজির এ রাজ্যে নেই বলেই জানিয়েছেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। রবিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘মহকুমা হাসপাতালের নিরাপত্তার বাড়তি দায়িত্ব নেবে সনকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের হাসপাতালে যে ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো রয়েছে একই ভাবে তারা পরিষেবা দেবে মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন মিশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর একটি ফ্লোরের দায়িত্বে থাকছে হেল্‌থ ওয়াল্ড হাসপাতাল।’

    জানা গিয়েছে, এ বার থেকে রোগী ভর্তি হলে পরিবারের লোকেদের ভিজ়িটিং পাস দেওয়া হবে। সেই পাস নিয়ে দিনে দু’বার সকাল ও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে পরিবারের লোকেরা রোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। শিশু ও প্রসূতি বিভাগে রোগীর সঙ্গে পরিবারের যিনি থাকবেন তাঁর স্বচিত্র পরিচয়পত্র লাগবে। নিরাপত্তার জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৪৮টি সিসি ক্যামেরা ও ৭৮ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তা সত্ত্বেও পুরুষ ও মহিলা বিভাগে যখন-তখন লোকজন ঢুকে পড়েন।

    রোগীর কোনও সমস্যা হলে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে পাড়া প্রতিবেশীরাও ঢুকে পড়েন। তাতে অসুবিধা হয় অন্যান্য রোগীদের। আড়াই মাস আগে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছিল মৃতের প্রতিবেশীরা। কয়েক বছর আগে সদ্যোজাত এক শিশু চুরির ঘটনায় হাসপাতালের কর্মীদের মারধর করার সঙ্গে ভাঙচুরও চালানো হয় মহকুমা হাসপাতালে।

    নিরাপত্তা আরও জোরদার হলে আগামী দিনে এমন ঘটনা আটকানো যাবে বলে আশা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের সুপার ধীমান মণ্ডল বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালের তরফে সহযোগিতা পাওয়া গেলে মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা আরও উন্নত হবে।’ বেসরকারি তিনটি হাসপাতাল সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে এগিয়ে এল কীভাবে?

    মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) প্রকল্পে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। আমরা এই তিনটি হাসপাতালকে তাদের সিএসআর প্রকল্পে মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে প্রস্তাব দিই। তারা রাজি হয়ে যায়।’

    জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে সনকা হাসপাতালের নিরাপত্তা আধিকারিকরা মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করে নিরাপত্তায় কোথায় খামতি রয়েছে তা দেখে গিয়েছেন। মিশন ও হেল্‌থ ওয়াল্ড হাসপাতালের হাউসকিপিং বিভাগের আধিকারিকরাও মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বোস, হেল্‌থ ওয়ার্ল্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান অরুণাংশু গঙ্গোপাধ্যায় ও সনকা হাসপাতালের চেয়ারম্যান পার্থ পবি— তিনজনরেই একই মন্তব্য। তাঁরা বলেন, ‘দুর্গাপুর শহরে আমরা কাজ করি। এই শহরের সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা উন্নয়নে আমরা দায়বদ্ধ।’
  • Link to this news (এই সময়)