সরেজমিনে দেখতে যাওয়া, কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা। বাড়ির ভিতরটা কি আদৌ পরিছন্ন? সেখানে মশার লার্ভা জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি নেই তো? কোথাও জল জমে নেই তো? এ সব দেখতেই গত সোমবার, ৫ অগস্ট বিকেলে বাগুইআটির অর্জুনপুরে গিয়েছিলেন বিধাননগর পুরনিগমের দুই মহিলাকর্মী, তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছিলেন।অভিযোগ, কী কারণে ওই পুরকর্মীদের আগমন, সেটা জানার পরেই একটি বাড়ির মালিক পোষা কুকুর লেলিয়ে দেন এবং ওই কুকুর তার পর রূপা নস্কর নামে পুরকর্মীর পায়ে কামড় বসায়। সবটা জানিয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে বিধাননগর পুরনিগমের তরফে। পুরনিগম সূত্রের খবর, বর্তমানে ওই মহিলার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মশা দমন অভিযানে পুরকর্মীদের সহযোগিতা না-করে উল্টে কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত। বাসিন্দারা সহযোগিতা না করলে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত ঠেকানো সম্ভব নয়।’
বাগুইআটির অর্জুনপুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিধাননগর পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের সাধারণ কর্মী থেকে শীর্ষকর্তারা। সখেদে তাঁরা বলছেন, ‘ডেঙ্গির প্রকোপ যাতে না-বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করতেই অভিযানে যান পুরকর্মীরা। বাড়ির ভিতর ঢুকে গন্ডগোল কিছু দেখলে তাঁরা সতর্ক করেন বাড়ির মালিক বা পরিবারের অন্য সদস্যদের। কিন্তু ৫ তারিখ যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে কর্মীরা আতঙ্কিত।’
এই অবস্থায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কী ভাবে অভিযান চলবে, তা নিয়ে চিন্তিত পুরনিগমের কর্তারা। পুরনিগম সূত্রের খবর, পুরকর্মীদের অভিজ্ঞতা বলছে, বাড়ির তুলনায় ফ্ল্যাটে গিয়ে বেশি সমস্যার মুখে তাঁদের পড়তে হচ্ছে। পরিচয়পত্র দেখার পরেও মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেকেই।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি অভিযানের দাবি তুলছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ। বিধাননগর পুরনিগমের এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, ‘সল্টলেকের একাধিক ব্লকে থাকেন প্রাক্তন বিচারপতি থেকে শুরু করে প্রাক্তন পুলিশকর্তা, প্রাক্তন আমলা। যাঁদের কয়েক জনের বাড়িতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। কারও বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা ভিতরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন, তো কোনও বাড়ি থেকে আবার ফোন করে দেওয়া হচ্ছে থানায়। ফলে আমাদের অভিযানে বাধা পড়ছে।’
এমনিতেই এ সব নিয়ে পুরকর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। ৫ অগস্ট বিকেলের ঘটনা সেই ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। ফি বছর মূলত সেপ্টেম্বর মাসের গোড়া থেকেই বিধাননগরে ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করে দেয় ডেঙ্গি। তার পরেও আমজনতার একাংশ যে ভাবে তাঁদের সঙ্গে এ বছরও অসহযোগিতা করছেন, তাতে পরিস্থিতি শেষমেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরনিগম।
জনস্বাস্থ্য আধিকারিক শতদল মল্লিকের অভিযোগ, ‘বাড়ির ছাদে রাখা ফুলের টব, ফ্রিজের ট্রে-তে জল জমিয়ে রাখার মারাত্মক অভ্যাস এখনও অনেকে ছাড়তে পারছেন না। গড়ে ১০টি বাড়ির ভিতরে ঢুকলে ৪-৫ টি বাড়িতেই জমা জলে মশার লার্ভা মিলছে।’