সোদপুরের বাসিন্দা ওই চিকিত্সক-পড়ুয়া ছোটবেলায় পড়তেন সোদপুরেরই চন্দ্রচূড় বালিকা বিদ্যালয়ে। তাঁর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষিকারা। ছোট থেকেই মেধাবী। স্কুলের বরাবরের ফার্স্ট গার্ল। মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক, সবেতেই প্রথম। উচ্চমাধ্যমিকের পর ডাক্তারিতে সুযোগ। এমবিবিএস পাস করে চেস্ট মেডিসিনে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। একইসঙ্গে ট্রেইনি চিকিত্সকও। সেই কৃতী ছাত্রীর এহেন নির্মম, করুণ পরিণতি। নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে স্তব্ধ জীবন! মানতে পারছেন না নির্যাতিতার ছোটবেলার স্কুল শিক্ষিকারা। প্রত্যেকেই হতবাক। নিষ্ঠুর সত্যিটা কেউ এখনও মেনে নিতে পারছেন না!
আর জি কর হাসপাতালে যাওয়ার আগে মধ্যমগ্রাম মাতৃসদন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন খুন হয়ে যাওয়া মহিলা চিকিত্সক-পড়ুয়া। মধ্যমগ্রাম পুরসভার অধীনস্থ মাতৃসদন অর্থাৎ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস স্পেশালাইজড অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন নির্যাতিতা। এই ঘটনার শোনার পর থেকেই চোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না সহকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁর মত মেয়ে আর পাওয়া যাবে না। তাঁর ব্যবহার, তাঁর চিকিৎসা, রোগীদের বোঝানো সবটাই ছিল ভীষণ কেয়ারিং। তিনি যখন ইমারজেন্সিতে ডিউটি করতেন, তখন দুর্ঘটনার কবলে পড়া রোগীদের ব্লিডিং বন্ধ করতে তাঁর সেলাই দেখে অন্যান্য সিস্টার-নার্সরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন। এত ভালো সেলাই দিতে তাঁরা কখনও কাউকে দেখেনি।
প্রত্যেকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার। সময়মতো ডিউটিতে আসা। প্রথমদিকে ইমারজেন্সিতে ডিউটি এবং সব শেষে আইসিইউয়ের দায়িত্বে। মাথা উঁচু করে সুনামের সঙ্গে সবটা সামলেছেন তিনি। এরপর যখন তিনি মাতৃসদন ছেড়ে আরজিকর হাসপাতালে চলে যান, তখন সবারই মনখারাপ হয়েছিল খুব। এই ভেবে মনখারাপর হয়েছিল যে একজন ভালো মানুষকে আর আগামী দিনে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাঁকে যে আর কোনদিনও পাওয়া-ই যাবে না, তাঁর যে এমন নিষ্ঠুর নির্মম পরিণতি হবে, তিনি যে সমস্ত ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবেন, তা দুঃস্বপ্নতেও কারও কল্পনায় আসেনি।