এই সময়, কৃষ্ণনগর: মেয়ের প্রবল পেটে ব্যথা। তাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেছিল বাবা। সারা রাত সেখানেই ছিল। পরের দিন সকালে মেয়েকে ছুটি দিয়ে দেয় হাসপাতাল। বাবা-মেয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। তারা ঘরে ঢুকতেই শোনা যায় আর্তনাদ। পড়শিরা ছুটে গিয়ে দেখেন, ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে গৃহকর্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ। ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ।নিহতের স্বামী পুলিশকে জানায়, বাড়িতে লুটপাট হয়েছে। দুষ্কৃতীরাই চুরি করতে এসে তার স্ত্রীকে খুন করেছে। ও দিকে, মেয়ে আবার দাবি করে, মায়ের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই প্রেমিকই এই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ তার। খুনের সম্ভাব্য দুই কারণের কথা শুনে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
কিন্তু শেষপর্যন্ত জানা যায়, চুরি-ডাকাতি নয়, মহিলাকে খুনের পরে বাবা-মেয়ে মিলেই গল্প ফেঁদেছিল। রহস্য ফাঁস হতে পুলিশকর্মীরাও হতবাক! পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক জেরায় বাবা-মেয়ে দু’জনেই অপরাধ কবুল করেছে।
চুরি-লুটপাটের গল্প ফেঁদেছিল স্বামী। সঙ্গ দিয়েছিল বছর একুশের মেয়েও। শেষ রক্ষা হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিহতের স্বামী এবং মেয়েকে। নদিয়ার পলাশিপাড়া থানার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের ঘটনা।
গত বুধবার সকালে বাড়ি থেকে চামেলি বিশ্বাস(৪৬)-এর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। নিহতের স্বামী পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক শ্যামল বিশ্বাস দাবি করেছিল, তাদের ২১ বছরের মেয়ে শাঁওলির বুকে ব্যথা হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে তাকে তেহট্ট হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। বুধবার সকালে বাড়ি ফিরে ঘরের মধ্যে স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তারা। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে আসে পুলিশ।
শ্যামল জানায়, ঘর থেকে সোনার গয়না, মোবাইল ফোন, টাকা খোয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গে দাবি করে, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়েছিল। পুলিশকে সে বলে, যারা ঘরে ঢুকে চুরি-লুটপাট চালিয়েছে, তারাই স্ত্রীকে খুন করেছে বলে তার সন্দেহ।
অন্য দিকে, শ্যামলের মেয়ে শাঁওলি আবার পুলিশের কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে জানায়, তার মায়ের সঙ্গে বার্নিয়া গ্রামের যে ব্যক্তির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল, সে-ই খুনের ঘটনায় জড়িত। সেই মতো তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিন্তু বাবা-মেয়ের বয়ানে বেশ কিছু ফাঁক থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। এর পরেই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাতেই দু’জনে অপরাধ কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবি।
পড়শিদের কাছ থেকে জানা যায়, মহিলার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে পরিবারের মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগে থাকত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এমন কোনও অশান্তির সময়ে চৌকির ভাঙা পায়া দিয়ে আঘাত করে বধূকে খুন করা হয়েছিল। হেফাজতে পেয়ে ধৃতদের আরও জেরা করে পুরো রহস্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার খুনের ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধ আড়াল করতে রীতিমতো চিত্রনাট্য সাজিয়ে বাবা-মেয়ে বাড়ি ছেড়েছিল বলে পুলিশের সন্দহে। বুধবার ফিরে এসে নাটক করে তারা। তবে তাতে লাভ হয়নি। পুলিশের সন্দেহ হয়। এ দিকে, বাবা-মেয়েই যে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তা শুনে অবাক প্রতিবেশীরা।
রবিবার ধৃতদের তেহট্ট আদালতে তোলা হলে শ্যামলকে দশ দিনের এবং মেয়ে শাঁওলিকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।