• ভেঙে পড়েননি, অসুস্থতা উপেক্ষা করে জীবন সংগ্রামে ব্রতী শিল্পী লাল্টু পাল...
    আজকাল | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • মিল্টন সেন, হুগলি:‌ শারীরিক অসুস্থতাকে সঙ্গী করে কঠিন জীবন সংগ্রাম। শরীরে লাগানো রয়েছে নল। পথ দুর্ঘটনায় বছর ১৮ বছর আগে গুরুতর জখম হয়েছিলেন চুঁচুড়ার লাল্টু পাল। চলেছে দীর্ঘ চিকিৎসা, সঙ্গে বাঁচার লড়াই। তখনই তাঁর শরীরে লাগিয়ে দেওয়া হয় ক্যাথিটার। যার পর থেকে এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ আঠারো বছর। তবে কোনও অবস্থাতেই তিনি তাঁর শিল্পী সত্ত্বা থেকে সরে আসেননি। গড়ে চলেছেন একের পর এক প্রতিমা। চুঁচুড়া শামবাবু ঘাট সংলগ্ন প্রতিমা নির্মাতা লাল্টু পালের জীবন সংগ্রামের কাহিনী সিনেমার থেকে কম নয়।

    প্রতিমা গড়ার সরঞ্জাম কিনতে কলকাতা যাওয়ার পথে ২০০৬ সালে তার জীবনে নেমে এসেছিল সেই ভয়ঙ্কর দিন। রাস্তায় পড়ে থাকা লাল্টু বাবুর শরীরের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল বাস। পেটের উপর দিয়ে গেছিল বাসের চাকা। গুরুতর জখম লাল্টু বাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দুর্ঘটনায় তাঁর মল এবং মূত্রের দ্বার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং চিকিৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টায় সেবার কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যান। তবে, তাঁর পর থেকেই পাকাপাকি ভাবে শরীরে লাগিয়ে দেওয়া হয় নল। সেই নল যুক্ত রয়েছে একটি বালতির সঙ্গে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ক্যাথিটার। হাজার কষ্ট হলেও বংশানুক্রমে ঠাকুর তৈরির ব্যবসা ছাড়েননি। যদিও ছোট থেকেই প্রতিমা তৈরি করতেন লাল্টু ও তার ভাই। তার পর বাবার হাত ধরেই কাজ শেখা।

    বাবা প্রয়াত হয়েছেন অনেকদিন হল। হাজার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তার কাজের ক্ষেত্রে মুখে না নেই। হাতে নল ও বালতি নিয়েই ঘর বাঁধা থেকে মাটি লাগানো এমনকি ঠাকুরের সাজ তৈরি করা সবই করছেন শিল্পী লাল্টু পাল। এই প্রসঙ্গে লাল্টু বাবু জানিয়েছেন, ১২ বছর বয়সে বাবার কাছে তিনি ঠাকুর গড়ার কাজ শিখেছেন। তখনই ঠাকুর তৈরির কাজ শিখেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর অসুবিধে হলেও দুই ভাই মিলে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঠাকুর তৈরির কাজ। এরই মধ্যেই ২০০৬ সালের দূর্ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনযাপন তিনি ভুলেছেন। শরীর নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও ভেঙে পড়েননি। বরং প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজও শিল্পী লাল্টু পাল তৈরি করে চলেছেন একের পর এক মৃন্ময়ী প্রতিমা।

    ছবি:‌ পার্থ রাহা
  • Link to this news (আজকাল)