• বগটুই: কোর্টে অভিযুক্তদের চিনতে পারলেন না সাক্ষীরা
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রামপুরহাট আদালতে বগটুই গণহত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের চিনতেই পারলেন না স্বজনহারা মিহিলাল সহ মূল সাক্ষীরা। ঘটনার বিবরণ জানালেও তাঁরা কাউকে দেখেননি বলে সাক্ষী দেন। এরপরই আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিনই মূল সাক্ষীরা যদি প্রতিকূলে চলে যায়, তাহলে আমাদের আর করার কিছু থাকে না।

    ২০২২ সালের ২১ মার্চ বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়। পরে নিহতর অনুগামীরা বগটুই গ্রামে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১০ জনের। যা গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দেয়। সেই ঘটনায় প্রথমে সিট ও পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পর্যায়ক্রমে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় লালন শেখের। দু’জন নাবালক হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালতে অভিযুক্তদের নামে চার্জশিটও জমা করে সিবিআই।

    প্রায় আড়াই বছর ধরে গত ১২ জুলাই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন সহ মোট ২৩জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত। সেইমতো সোমবার ৯ অভিযুক্ত বাদে সকলকেই এজলাসে হাজির করানো হয়। এদিন ছিল এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন। মূল সাক্ষী হিসেবে ছিলেন স্বজনহারা মিহিলাল শেখ সহ তাঁর দুই ভাই। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব চলে। পরে সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে বলেন, এই কেসের মূল সাক্ষী ছিলেন মিহিলাল, বানিরুল ও শেখলাল শেখ। তাঁদের পরিবারের ১০ জন পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। এদিন সাক্ষীরা ওইদিনের ঘটনার কথা বলেছেন। নিজের পরিবারের লোক মারা গিয়েছে, বোমা পড়েছে, আগুন জ্বলেছে বলেছেন। কিন্তু কেউই কোর্টের সামনে আসামিদের চিনতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, কাউকে দেখেননি। এরকম একটা ঘটনায় মূল সাক্ষী যদি প্রতিকূলে যান, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। মঙ্গলবার আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রয়েছে। 

    উল্লেখ্য, ঘটনার তিনদিনের মাথায় বগটুই গ্রামে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় মিহিলাল সহ স্বজনহারারা এই ঘটনার জন্য তৎকালীন তৃণমূলের রামপুরহাট-১ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে দায়ী করেন। ওইদিনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পেতেই পুলিস আনারুলকে গ্রেপ্তার করে। মিহিলাল সহ স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের চাকরি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এমনকী পরে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে ভাদু অনুগামী একাধিক অভিযুক্তদের নাম জানিয়ে এসেছেন। এরই মধ্যে মিহিলাল সহ স্বজনহারাদের অনেকে বিজেপিতে যোগ দেন। যদিও বর্তমানে মিহিলাল ছাড়া সকলেই তৃণমূলে। 

    এদিন আদালতে মিহিলাল অভিযুক্তদের চিনতে না পারা প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল বলেন, খুবই দুঃখের। যাঁরা আজকে চিনতে পারছেন না তাঁরাই তখন অভিযোগ করেছিলেন। মিডিয়ার সামনে এসে বলেছিলেন অভিযুক্তদের সকলকে চিনি, জানি। আজ যখন চিনতে পারছেন না, তখন এর পিছনে নিশ্চয় কোনও কারণ আছে। পুলিস প্রশাসনেরই উচিত সেই কারণ খুঁজে বের করা। যদিও প্রতিক্রিয়া নিতে মিহিলালকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে স্বজনহারা কিরণ শেখ বলেন, এই মুহূর্তে কিছু বলব না।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)