• সর্বভারতীয় র‌্যাঙ্কিংয়ে নামতে নামতে কবিগুরুর বিশ্বভারতী ১৫০ নম্বরে
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাধতা, বোলপুর: লজ্জার! সোমবার প্রকাশিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটিউশনাল র‌্যাঙ্কিং ফ্রেম ওয়ার্ক (এনআইআরএফ)-এর সমীক্ষায় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতীর স্থান নামতে নামতে পৌঁছল  ১৫০তম স্থানে। র‌্যাঙ্কিংয়ে মূলত ঠাঁই হয় দেশের ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সেই তালিকায়ও ঢুকতে পারল না বিশ্বভারতী। অথচ, আট বছর আগেও র‍্যাঙ্ক ছিল ১১তম। এরপর থেকেই অধঃপতন। আর অধঃপতনের মূলে প্রাক্তন বিতর্কিত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলকেই দায়ী করেছেন অনেকেই। তাঁর কার্যকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে। এমনই অভিযোগ প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের। তিনি বিদায় নিলেও বর্তমান কর্তৃপক্ষকে ফল ভুগতে হচ্ছে এমনটাই অভিমত তাঁদের। ‌এর পাশাপাশি স্থায়ী উপাচার্য না থাকা, শিক্ষার পরিকাঠামো, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকা, অন্যতম বড় কারণ বলেও মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামহল। তবে কারণ যাই হোক না কেন, এই অবনমনে লজ্জায় মাথায় হেঁট হওয়ার জোগাড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের।

    এনআইআরএফের এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স। দ্বিতীয় স্থানে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় স্থানে দিল্লিরই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রথম দশে স্থান পেয়েছে রাজ্যের একমাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। রয়েছে নবম স্থানে। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৮তম স্থানে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটিউশনাল র‌্যাঙ্কিং ফ্রেম ওয়ার্কের বিশ্বভারতী ১১তম স্থানে ছিল। এটাই ছিল এ যাবৎকালের সেরা র‍্যাঙ্কিং। তখন স্থায়ী উপাচার্যের পদে ছিলেন সুশান্ত দত্তগুপ্ত। কিন্তু তাঁর অপসারণের পরপরই বিশ্বভারতীর অবনমনের ধারা যেন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এই সময়ে স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় সেই পদ সামলে ছিলেন অধ্যাপক স্বপন দত্ত ও অধ্যাপিকা সবুজকলি সেন। এরপর ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে স্থায়ী উপাচার্য পদে বসেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। কিন্তু তাঁর বিতর্কিত কার্যকলাপে বিশ্বভারতীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে থাকে বলে অভিযোগ। তাঁর দমন-পীড়ন নীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কার্যত ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয় বলে বিভিন্ন মহলের দাবি। বিরুদ্ধাচারণ করলেই ছাত্র থেকে শুরু করে অধ্যাপকদের শোকজ, সাসপেন্ড। শিক্ষা ব্যবস্থায় তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। ওই বছরই র‍্যাঙ্কিং নামে ৩১তম স্থানে। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সালে ৩৭ তম, ২০২০ সালে ৫০তম ও ২০২১ সালে ৬৪তম স্থানে অবনমন হয়। তবে, ২০২২ সালে বিশ্বভারতী নামতে নামতে ৯৮তম স্থানে পৌঁছয়। তাতে চূড়ান্ত সমালোচনার মুখে পড়েন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ২০২৩ সালে এক ধাপ উঠে ৯৭তম স্থানে ছিল। এরপর ২০২৩ এর এপ্রিল থেকে ২০২৪ এর মার্চ এই সময়সীমার ভিত্তিতে এ বছরের র‍্যাঙ্কিং এদিন প্রকাশিত হয়। এর অধিকাংশ সময়েই উপাচার্য পদে ছিলেন বিদ্যুৎবাবু। কিন্তু র‍্যাঙ্কিং দেখে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, যে বিশ্বভারতী ১৫০তম স্থানে নেমে গিয়েছে। বিশ্বভারতীর এই অবনমন লজ্জার। এমনটাই মনে করছেন প্রাক্তনী ও আশ্রমিকরা। এর জন্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তুঘলকি আচরণকেই তাঁরা দায়ী করছেন। ক্যাগ রিপোর্টে সেই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিও করতে হবে বলে জানা গিয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)