• সাতদিনের বদলে এবার থেকে চারদিন বসবে খোয়াইয়ের হাট
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: এবার থেকে আর সাতদিন নয়। শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির জঙ্গলে খোয়াইয়ের হাট বসবে সপ্তাহে চারদিন। প্রতি সপ্তাহের শুক্র, শনি, রবি ও সোমবার হাট বসবে। হাট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করার পর এমনই সিদ্ধান্ত নিল বোলপুর বনদপ্তর। প্রতিদিন হাট বসার ফলে অভয়ারণ্যের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যত্রতত্র প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষণ যেমন হচ্ছিল তেমনি শব্দ দূষণেও জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। দূষণের প্রভাব অভয়ারণ্যের ভিতরে ঝিল সংলগ্ন বন্যপ্রাণেও পড়ছিল। তাই শীতকালে পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগে ছিল বনদপ্তর। এরপর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে রবিবার হাট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বোলপুরের রেঞ্জ অফিসার জ্যোতিষ বর্মন। বনদপ্তরের ডাকে সাড়া দিয়ে সাতদিনের পরিবর্তে তাঁরা চারদিন বসতে রাজি হয়েছেন। বাকি তিনদিন হাটের নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার, বৃক্ষরোপণ প্রভৃতি কর্মসূচি রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সম্পাদক আরোজ মণ্ডল। 

    নির্মল প্রকৃতি, গাছের ছায়া, লালমাটির খোয়াই, পাশে ময়ূরাক্ষী সেচ খাল সব মিলিয়ে এক নৈসর্গিক পরিবেশ সোনাঝুরির। সেই কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই জঙ্গল। পোশাকি নাম শনিবারের হাট হলেও ইদানীং প্রতিদিনই হাট বসাচ্ছিলেন স্থানীয় শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা। এতে আর্থিকভাবে ফুলেফেঁপে উঠছেন ব্যবসায়ী, হোটেল ও রিসর্ট মালিকরা। বর্তমানে হাটে বিক্রেতার সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু যে পরিবেশের জন্য তাঁদের এই রমরমা সেই পরিবেশই ধ্বংসের মুখে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে জঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি, হোটেল ও রিসর্টের আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিক ও নোংরা বর্জ্য প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ফেলা হচ্ছে খোয়াইয়ের মধ্যে। এর ফলে একদিকে যেমন দূষণ বাড়ছে, অন্যদিকে দুর্গন্ধে সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয় মানুষ। এই বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে বনদপ্তরকে। এর সুরাহার জন্য হাট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে রবিবার বৈঠক করে বনদপ্তর। সেখানে সাতদিনের পরিবর্তে চারদিন হাট বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে। বোলপুরের রেঞ্জ অফিসার জ্যোতিষ বর্মন বলেন, হাটটি বল্লভপুর অভয়ারণ্যের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় শিল্পীদের রুজি রোজগারের বিষয় থাকলেও এর জন্য অভয়ারণ্যের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তাই শিল্পীদের বিষয়টি বোঝানো হলে তাঁরাও এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তাদের অভয়ারণ্যকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সেই কাজ হচ্ছে কিনা, তা দেখতে বনকর্মীরা নিয়মিত নজরদারি চালাবে। হাটের সম্পাদক আরোজ মণ্ডল বলেন, যে জায়গা ঘিরে আমাদের বেচাকেনা চলে, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপরেই বর্তায়। তাই যে তিনদিন হাট বন্ধ থাকবে, সেই দিনগুলিতে সাফাই অভিযান চালাবেন হাটের শিল্পীরা। বনদপ্তর ও হাটের শিল্পীদের এই সিদ্ধান্তে খুশি পরিবেশপ্রেমীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)