• বাগডোগরায় সাতসকালে দুর্ঘটনা, মৃত্যু ৬ পুণ্যার্থীর
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বাগডোগরা: বাগডোগরার ভুট্টাবাড়ি সংলগ্ন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ছয় পুণ্যার্থীর। আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। ঘণ্টা দেড়েক অবরোধ চলে। বাগডোগরা থানার পুলিস বাসিন্দাদের বুঝিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। 

    শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালতে ফাঁসিদেওয়ার দানাগছ থেকে ১১জনের একটি পুণ্যার্থীর দল হেঁটে বাগডোগরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জঙ্গলিবাবা মন্দিরে আসছিলেন। ওই সময় দেওঘর থেকে পুণ্যার্থী ভর্তি একটি গাড়ি আসছিল। রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে মন্দিরের দিকে আসছিলেন দানাগছের পুণ্যার্থীরা। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের পিছন থেকে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশের নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দানাগছের ছয় পুণ্যার্থীর। দেওঘর থেকে গাড়িতে আসা পুণ্যার্থীরাও জখম হন। তাঁদের উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

    ঘটনার খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাগডোগরা থানার পুলিস ও দমকল। আসেন মৃতদের পরিবারের সদস্যরাও। এলাকার লোকজন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিশাল পুলিস বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। আসেন শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবাশিস বসুও। মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, চালকের গাফিলতি না গাড়ির কোনও ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। 

    পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম গোবিন্দ সিংহ (২২), অমলেশ রায়চৌধুরী (২০), প্রহ্লাদ রায় (৩৮), কনক বর্মন (২২), প্রণব রায় (২৮), হিমেশ রায়চৌধুরী (১৭)। হরিদাস বর্মন নামে এক পুণ্যার্থী বলেন, ভোর সাড়ে৪টে নাগাদ আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। সোয়া ৬টা নাগাদ আমরা চারজন জল খেতে দাঁড়াই। বাকিরা হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটি গাড়ি সজোরে পিছন থেকে ধাক্কা মারে বাকি পুণ্যার্থীদের। দৌড়ে যাই আমরা। গিয়ে দেখি কয়েকজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। আতঙ্কে কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার ছেলে কনক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। চোখের সামনে ছেলেকে এভাবে চলে যেতে দেখতে হবে, ভাবিনি কখনও। 

    মৃত সিভিক ভলান্টিয়ার প্রহ্লাদ রায়ের এক বন্ধু কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ভাই, কাকার ছেলে, তার বন্ধু সকলেই মারা গিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম। চোখের সামনে সকলকে এভাবে দেখব বিশ্বাসই হচ্ছে না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন হেটমুড়ি সিঙ্ঘিঝোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জগন্নাথ রায়ও। 

    দুর্ঘটনার পরই স্থানীয়রা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেই সময় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারেনি। একাধিক স্কুলবাস আটকে যায়। অবশেষে পুলিসের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।  
  • Link to this news (বর্তমান)