• হাউ হাউ করে কেঁদেই চলেছেন হরিদাস
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নকশালবাড়ি: বিদ্যুতের গতিতে ছুটে আসা গাড়িটি চোখের পলকে আটজনকে পিষে দিয়ে ছিটকে গিয়ে পড়ল নয়ানজুলিতে। চোখের সামনে এক ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল। ছোট ছেলের কাছে যাওয়ার আগেই শরীর থেকে প্রাণটা ওর চলে গেল। বাবা হয়ে ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সোমবার বিকেলে এমনই বিলাপ করছিলেন হরিদাস বর্মন। তবে বড় ছেলে ভুবনকে নিয়ে জল খাওয়ার জন্য দাঁড়ানোয় বরাত জোরে বেঁচে যায় তিনি। 

    ফাঁসিদেওয়া ব্লকের হেটমুড়ি সিঙ্গিঝোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হরিদাস বর্মন। পাড়ার লোকজনের সঙ্গে দুই ছেলে কনক ও ভুবন বর্মনকে নিয়ে বাগডোগরার জঙ্গলিবাবার মন্দিরের উদ্দেশ্যে রাত থাকতেই হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল ভোর ভোর শিবির মাথায় জল ঢেলে বাড়ি ফিরবেন। তারপর কাজে বের হবেন। দলের সকলেই পরিচিত। ছিলেন ১১ জন। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় বাগডোগরার মুণি চা বাগান এলাকায় জল খাওয়ার জন্য বড় ছেলে ভুবনকে নিয়ে দাঁড়ান হরিদাস। ততক্ষণে দলের বাকি পুণ্যার্থীরা হাঁটতে থাকেন। ওই সময়ই জাতীয় সড়ক ধরে তীরের গতিতে আসা একটি ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দলের আটজনকে একেএকে ধাক্কা মারে। সকলেই ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই ছ’জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে কনক হরিদাসের ছোট ছেলে। মাত্র ২২ বছর বয়সেই প্রাণ ঝরে গেল তাঁর। বাগডোগরা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।

    পেশায় দিনমজুর হরিদাসের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তারমধ্যেও দুই ছেলের পড়াশোনায় কোনও খামতি রাখেননি। দুই ছেলেকে রেখে একই জংলিবাবা মন্দিরে যাবেন বলে স্থির করেছিলেন। কিন্তু, দুই ছেলে বাবাকে একা ছাড়তে চাইছিলেন না। তাই প্রথমবার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বের হন। এক ছেলেকে হারাবেন কল্পনাও করতে পারেনি হরিদাস। তিনি বলেন, এভাবে ছেলেকে চোখের সামনে মরতে দেখব এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।

    এদিকে, খুড়তুতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার জল ঢালতে যাচ্ছিলেন প্রহ্লাদ রায় (৩৮) ও তার ভাই প্রণব রায় (২৮)। ঘটনায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। প্রহ্লাদ পেশায় ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার। কাওয়াখালি ট্রাফিক পয়েন্ট ডিউটি করতেন। বছর তিনেক আগে বিয়েও করেন। গোপালচন্দ্র রায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক। গোপালবাবুর ভাই বরদকান্ত রায়ের একমাত্র ছেলে প্রণব। সেও দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। খুড়তুতো তিন ভাই যাচ্ছিলেন। দু’জন মারা গেলেও বেঁচে যান নাবালক এক ভাই।
  • Link to this news (বর্তমান)