• রবিবারের মধ্যে তদন্ত শেষ না করলে সিবিআই: মমতা,  মৃতার বাড়িতে দাঁড়িয়ে পুলিসকে চরম সময়সীমা
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বরানগর: ‘ন্যক্কারজনক ঘটনা। মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার থেকে বড় অপরাধ কিছু হয় না। ওঁর সঙ্গে যে অত্যাচার করেছে, যেভাবে ওঁকে খুন করেছে... ভয়ঙ্কর। যে-ই জড়িত থাক, শাস্তি দিতে হবে। রবিবারের মধ্যে যদি পুলিস কিনারা করতে না পারে, কেসটা আর হাতে রাখব না। সিবিআইকে দিয়ে দেব।’ আর জি করে চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এভাবেই সর্বসমক্ষে পুলিসকে ‘ডেডলাইন’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এপ্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন তাপসী মালিক ধর্ষণের মামলা। তাঁর কথায়, ‘সিবিআইয়ের সাফল্যের হার খুব কম। তাপসী মালিককে ধর্ষণ-খুনের বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি।’ 

    আর জি কর নিয়ে তোলপাড় পড়েছে গোটা রাজ্যে। সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে-কানাচেও। পুলিস-প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিলেও সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনড় আন্দোলনকারীরা। এর মাঝেই সোমবার দুপুরে নির্যাতিতার সোদপুরের বাড়িতে যান মমতা। তাঁর বাবা-মাকে অভিযুক্তের সাজার বিষয়ে নিশ্চিত করেন। এরপরই কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েলকে তিনি বলেন, ‘মা-বাবা আমাকে বলেছেন, হাসপাতালের ভিতরই আরও কেউ এর নেপথ্যে রয়েছে। বিষয়টা খতিয়ে দেখুন। ওর বন্ধুবান্ধব সবাইকে ডেকে কথা বলবে পুলিস। যিনি বাড়িতে প্রথম ফোন করেছিলেন, তাঁকেও ডাকবেন।’

    মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আসরে নেমেছে লালবাজার। সিটের সদস্য বেড়ে হয়েছে ১৩। ডিসি (ফার্স্ট ব্যাটেলিয়ন) অমিত ভর্মাসহ মোট ৬ জন যুক্ত হয়েছেন। সিটকে সাহায্য করবেন আরও ১৫০ জন পুলিস। প্রতিদিন তিন শিফ্টে ৫০ জন করে কাজ করবেন তাঁরা। আগামী ছ’দিন কোন পথে এগবে তদন্ত? অভিযুক্ত সঞ্জয়ের সঙ্গে ঘটনাস্থলে অন্য কেউ সত্যিই ছিল কি না, সেই খোঁজ কিন্তু শুরু করে দিয়েছে লালবাজার। ধৃত সিভিকের গত কয়েকদিনের গতিবিধিও ট্র্যাক করা হচ্ছে। হাসপাতালে কাদের সঙ্গে সঞ্জয়ের নিয়মিত যোগাযোগ? কতবার সে আসত সেখানে? ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের কোন কোন ফ্লোরে যেত? ওই সেমিনার হলে সে আগে গিয়েছিল কি? সব তথ্য যাচাই করবে পুলিস। সেই সূত্রে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার গত ৩০ দিনের ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা। প্রতি ১৫ মিনিটের ফুটেজ ধরে ধৃতের গতিবিধি পরখ করা হবে। সিভিকের মোবাইলের কল ডিটেইলস সহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিস। সিভিক-পুলিসকর্মী মিলিয়ে আউটপোস্টের পাঁচজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাঁদের। একইসঙ্গে, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রমাণ পেতে ডিএনএ ম্যাপিংয়ের পথে হাঁটছে লালবাজার। নির্যাতিতার দেহ থেকে পাওয়া সিমেন নমুনার সঙ্গে ধৃতের রক্ত ‘ম্যাচ’ করাচ্ছেন তদন্তকারীরা। রহস্যের জাল গুটিয়ে আনতে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় সায়েন্টিফিক উইং। পুরো চারতলা বিল্ডিংয়ের ভিডিওগ্রাফি করা হয়। পরে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে সেখানে যান গোয়েন্দারা। কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, অকুস্থলে কতজনের উপস্থিতি সম্ভব, পরীক্ষা করেন তাঁরা। ঘটনার রাতে চারতলায় ডিউটিতে থাকা সাতজন চিকিৎসককে সোমবার লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদিন মৃতার বাড়ি ও লালবাজারে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দলও। এরইমধ্যে হাইকোর্টে আর জি কর কাণ্ডে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দাখিল হয়েছে। বিচারবিভাগীয় তদন্ত, সিবিআই তদন্ত সহ একাধিক দাবি রয়েছে তাতে। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে আজ শুনানি হওয়ার কথা। আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির কথায়, ‘তদন্ত ঠিকমতো হচ্ছে না। ১০ বছর আগে ধনঞ্জয় কেসেও একই ঘটনা ঘটেছিল।’ আইএমএ (রাজ্য) ও ডাক্তারদের যৌথ মঞ্চের দাবি, তৎকালীন অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে না। উনি ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ লোপাটে প্রভাব খাটিয়েছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)