• ঢাকায় মিনি কলকাতা বইমেলা বাতিল, কোটি কোটি টাকার বই ছাপিয়ে ক্ষতির মুখে প্রকাশকরা 
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০২৫ সালের ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ান থাকবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত নয়। অন্তত পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিন্ড কর্তাদের কথায় তাই উঠে এসেছে। যেখানে কলকাতা বইমেলার আয়োজনকারীরা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই এগনো হবে। প্রসঙ্গত, হাসিনা উৎখাতের পর্ব থেকে যেভাবে পড়শি দেশে রীবন্দ্রেনাথের মূর্তি ভাঙচুর, নজরুল ইসলামের বই পোড়ানো সহ যেভাবে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস নিধন যজ্ঞ চলছে, তাতে এপারের মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। কলকাতা বইমেলায় ‘বয়কট বাংলাদেশ’ প্রচার চলছে সমাজমাধ্যমে। এই প্রচার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এপারের নেটিজেনদের মধ্যে। বাংলাদেশ বিরোধী এপারের বইপ্রেমীদের এই দাবিকে ‘মান্যতা’ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাই সরকারি সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হচ্ছে গিল্ড।  

    কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গণে সবথেকে বড় প্যাভিলিয়ন থাকে বাংলাদেশের। যে প্যাভিলিয়নে স্টলের সংখ্যা থাকে ৫০-৬০টি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা বইয়ের সম্ভার নিয়ে যোগ দেয় এই বইমেলায়। বছর কয়েক আগে প্রায় ৭৫টি স্টল নিয়ে সেজে উঠেছিল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। এযাবৎকালের মধ্যে কখনও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন কলকাতা বইমেলার আসর থেকে বাদ পড়েছে, এমন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবারই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের অশান্তি পরিস্থিতির জেরে বইমেলায় কী প্রভাব পড়বে? আদৌ বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন হবে? পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিন্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সকলের সামনে ভেসে উঠেছে। এই অবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে, ফলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে আমরা এককভাবে কোনও পদক্ষেপ করব না।

    ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে বাংলাদেশকে ‘বয়কট’ করার ডাক উঠেছে। যা নিয়ে গিন্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, সামাজিক মাধ্যমে কে, কী দাবি করল বা আওয়াজ তুলল, তা আমাদের বিচার্য বিষয় নয়। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার সঙ্গে দু’দেশের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। ফলে কেন্দ্রের সরকারের সিদ্ধান্ত মতো পদক্ষেপ করা হবে।

    চলতি বছরের ১৮ থেকে ৩১ জানুয়ারি কলকাতা বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরের বইমেলার দিনক্ষণ এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে আগামী অক্টোবরের গোড়ায় কলকাতা বইমেলার ‘ঢাকা চ্যাপ্টার’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেবিষয়ে আলোচনা করতে এমাসেই গিল্ড কর্তাদের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর বাতিল করা হয়েছে। ওপারের প্রকাশনা সংস্থাগুলি কলকাতা থেকে বই ছাপিয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে বিক্রি করে। রকমারি ডট কম, বাতিঘর, অন্যরকম, প্রথমা, বুক চয়েজ, মিডিয়া স্টার লিমিটেড ইত্যাদি প্রকাশনী সংস্থা প্রায় দু’কোটি টাকার বই ছাপানোর বরাত দিয়েছিল কলকাতায়। ২০-২৫ লক্ষ টাকার বই দেজ সংস্থা একাই ছাপিয়ে বসে আছে। এখন এই বিপুল পরিমাণ টাকার অঙ্কের বই ছাপানোর পরে কে কিনবে, তা নিয়ে মাথায় হাত প্রকাশকদের।
  • Link to this news (বর্তমান)